ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

​২৭টি অগ্নিগদ্ধ লাশ ও ভাইবারের ভাইব্রেশন: স্যালিউট টু ভাইবার জেনারেশন

২৭টি মানুষ পুড়ে পুড়ে ছাই হলো কিন্তু গাছের ২৭টি পাতাও পড়লো না ঝরে। মানুষ তার নিরাপত্তার জন্য বছরে ২৭ হাজার  কোটি টাকা রাষ্ট্রকে দেয় কিন্তু ২৭টি গুলিও বের হলো না এই হত্যাকাণ্ড থামাতে। 
 
১৭ কোটি মানুষের দেশে ১৭ জন মানুষও প্রতিবাদ করলাম না। ২ কোটিরও বেশি ঢাকাবাসীর ২ জনও রাস্তায় দাড়িয়ে প্রতিবাদ জানালো না, কেউ বললো না – আগুন দিয়ে যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে তারা কেউ মানুষ না, সেই অমানুষ পশুদের আক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচাতে, নিজে বাঁচতে আসুন হাতে হাত মেলাই। 
 
এমন কী ৭ কোটি তরুণ জনগোষ্ঠীর কেউ জাগলো না আগুনের তাপে, অগ্নিদগ্ধ মানুষের গগনবিদারী অসহ্য অমানুষিক চিৎকারে । আগুন তো এখনো তার আমার গায়ে লাগে নি! ইডেন কলেজের অগ্নিদগ্ধ তিন ছাত্রী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী – মরুক ওরা, বাসের হেলপার, ড্রাইভার – এগুলো তো মানুষের বাচ্চা না! মরুক ছোটলোকের বাচ্চারা!! আমাদের কী!! 

ভাইবারের ভাইব্রশেন যেই বন্ধ হলো, হঠাৎ করে ঘুমিয়ে থাকা ৯০ লক্ষ তরুণ তরুণী কেঁপে উঠলো। আচ্ছা ভাইব্রেশন বন্ধ হলে কেঁপে উঠে কেনো? ভাইব্রেশন বন্ধ হলে তো ঘুম ভালো হবার কথা! ও আচ্ছা, এরাই বাংলাদেশের তরুণ-তরুণী যারা আগামী দিনে দুর্নীতিমুক্ত উন্নত একটা দেশ বানাবে।তরুণরাই বদলে দেবে দেশ, সেই আশায় দিন গুনছি আমরা সবাই।  

আগুন দিয়ে যারা পোড়ায় তারাও তরুণ । যাদের কাজ নারী শিশুর বিপদে এগিয়ে যাওয়া, তারাই পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে নারী শিশু আর গরীব মানুষদের পুড়িয়ে মারে, তারা তো খুব খারাপ তাই না? 

আর তুমি এইসব নারী শিশুর অগ্নিদগ্ধ মানুষদের দেখেও না দেখার ভান করো, তোমার ঘুম আসে , কিন্তু সেই তুমি কেঁপে উঠো ঠিকই ভাইবারের ভাইব্রেশন বন্ধ হলে! তোমার প্রতিবাদে  ঝড় ওঠে, সেই প্রতিবাদে কেঁপে ওঠে দেশ! যারা পেট্রোল দিয়ে মানুষ পোড়ায়, নিষ্ঠুর বর্বর সেই সব নষ্ট তরুণদের সাথে আমাদের তাহলে তফাৎ কোথায়?  

মানুষ হত্যায় তুমি ঘুমাও, আর সেই ঘুম ভাঙে ভাইবারের ভাইব্রেশন বন্ধ হলে! ৭ কোটি তরুণ তরুণী কি লাগে একশ ঘাতক পেট্রোল বোমাবাজদের জীবনের ভাইব্রেশন থামিয়ে দিতে ?

ভাইভারের ভাইব্রেশন নিয়ে না ভেবে একটু কি ভাবা যায় না, বার্ন ইউনিটের অগ্নিদগ্ধ মানুষটির কথা? যে চিৎকার করে বলে, “স্যার , আমারে গুলি করে মেরে ফেলেন স্যার, একটা গুলি করেন স্যার, একটা গুলি প্লিজ, সইতে পারছি না স্যার, আল্লাহর দোহাই লাগে, স্যার আমাকে গুলি করে মেরে ফেলুন!”

সেই চিৎকারে কি ঘুম ভাঙবে না? শ’খানেক পেট্রোল বোমাবাজদের কে থামাবে ? তুমি কি নিশ্চিত যে পেট্রোল বোমায় তুমি বা তোমার প্রিয় মানুষগুলো বেঁচে যাবে?

ঠিক আছে তাহলে ছাগলের সেই জনপ্রিয় গল্পটা বলি - 
তুমি কি ১০০ ছাগল এক সারিতে দেখেছো কখনো ? ১০০ ছাগোলের সামনে শুধু ‘কাঠালপাতা’ রেখে দিলে তাদের বেঁধে রাখতে হয় না।তারা কোথাও যায় না , মনের সুখে কাঠালপাতা খেতেই থাকে! 

কসাই যখন সারির প্রথম ছাগলটিকে জবাই করে, তখন ২-১০০ তম বাকি ৯৯ ছাগল একটু আড় চোখে প্র্রথম ছাগলে জবাই দৃশ্য দেখে পুনরায় খাওয়ায় মনোযোগ দেয়, “যাক প্রথমটাকে জবাই করেছে, আমি বেঁচে গেছি, এখন মনের সুখে কাঠালপাতা খাই”। কসাই পরের দিন যখন ২ নাম্বার ছাগলটিকে জবাই করলো, তখন ৩-১০০ তম বাকি ৯৮ ছাগোল একই কথা ভাবলো, “যাক দ্বিতীয়টাকে জবাই করেছে, আমি বেঁচে গেছি, এখন মনের সুখে কাঠালপাতা খাই”!!এইভাবে ১০০তম দিনে কিন্তু শেষ ছাগলটিও জবাই হয়ে যায়!
মজার ব্যাপার হলো কোন ছাগলই বাঁধা ছিলো না। তাদের সামনে ছিলো শুধু কাঠালপাতা! 

তুমি অগ্নিদগ্ধ মানুষের সীমাহীন কষ্টের সুতীব্র চীৎকারে ঘুমিয়ে পড়ো আর জেগে উঠো ভাইবারের ভাইব্রেশন বন্ধ হলে!! ফেইসবুকে পোড়ানোর ছবি দাও লাইকের আশায়! ট্যাঙ্গোতে অ্যাকাউন্ট খুলে ডার্লিংকে ভিডিও চ্যাটে একটু খোলামেলা না দেখে ঘুমাতে পারি না!

তোমার এই কাঁপাকাঁপি বন্ধ হবে  তুমি, আমি বা তোমার আমার প্রিয়জন যখন ঝলসে যাবে আগুনে আর চিৎকার করে বলতে থাকবো, “স্যার, আমারে গুলি করে মেরে ফেলেন স্যার, একটা গুলি করেন স্যার, একটা গুলি প্লিজ, সইতে পারছি না স্যার, আল্লাহর দোহাই লাগে, স্যার আমাকে গুলি করে মেরে ফেলুন!”

স্যালিউট জানাই ভাইবার জেনারেশনকে!

ছবি
সেকশনঃ সাধারণ পোস্ট
লিখেছেনঃ নিজাম দরবেশ তারিখঃ 20/01/2015
সর্বমোট 4855 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন