ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

বিশ্বের বিস্ময়: ক্রোয়েশিয়া ও ক্রোয়েট জাতি!

১৯৯১ সালে স্বাধীন হবার পরে ১৯৯৩ সালে ক্রোয়েশিয়া ফিফার সদস্যপদ লাভ করে। ১৯৯৩ সালে ফিফা ফুটবল র‌্যাংকিংয়ে ক্রোয়েশিয়ার অবস্থান ছিল ১২২, ১৯৯৮ সালে তা হয় ৪ এবং বর্তমানে ২০। ক্রোয়েশিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ৪৫ লক্ষ।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে ১৯৭৪ সালে ফিফার সদস্যপদ লাভ করে। ক্রোয়েশিয়া যে বছর ফিফার সদস্যপদ লাভ করে সেই ১৯৯৩ সালে ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৬ যা ক্রোয়েশিয়ার থেকে ৬ ধাপ উপরে। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯৪, এ বছরের প্রথম র‌্যাংকিংয়ে এ অবস্থান ছিল ১৯৭; ৩ ধাপ এগিয়ে এখন হয়েছে ১৯৪।

ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অবস্থান ছিল ১১০, ১৯৯৬ সালে। যা হোক এ বছরে ৩ ধাপ এগিয়ে ১৯৪ হওয়াটা একটা অগ্রগতি যা অবশ্যই রোল মডেলের অংশ হিসেবে আশাব্যঞ্জক।

১৫৩৮ থেকে ১৯১৮ পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়া ছিল হাব্সবুর্গ সাম্রাজ্য এবং অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির অংশ, ১৯১৮ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত যুগোস্লাভিয়ার অংশ। ১৯১৮ সালে সার্বিয়া, মন্টেনিগ্রো, স্লোভানিয়া, মেসিডোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া আর বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা মিলে গঠন করে নতুন রাষ্ট্র যুগোস্লাভিয়া। যুগোস্লাভিয়া নামের অর্থ দক্ষিণ স্লাভদের দেশ। পূর্ব ইউরোপের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই নৃতাত্ত্বিক দিক দিয়ে বৃহত্তর স্লাভ জাতির অংশ। বর্তমান ক্রোয়েশিয়া ১৯৯১ সালের ২৫শে জুন প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চলা জাতিগত দ্বন্দ্ব ও গৃহেযুদ্ধে ১৯১৮ সালে গঠিত যুগোস্লাভিয়া দেশটি ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া, স্লোভেনিয়া এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এই চারটি স্বাধীন রাষ্ট্রে ভাগ হয়ে যায়। সার্বিয়া আর মন্টেনিগ্রো দুটি প্রদেশ মিলে ‘ফেডারেল রিপাবলিক অব যুগোস্লাভিয়া’ নাম নিয়ে কিছুকাল টিকে থাকলেও ২০০৬ সালে মন্টেনিগ্রো স্বাধীন হয়ে গেলে ইতিহাসে বিলীন হয়ে যায় মার্শাল টিটোর গড়া যুগোস্লাভিয়া নামের দেশটি। পরবর্তীতে সার্বিয়া ভেঙ্গে দুটি রাষ্ট্র হয়। একটি সার্বিয়া অপরটি কসোভো।

প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া ভেঙ্গে এখন সাতটি দেশ হয়েছে- ১. ক্রোয়েশিয়া ২. মেসিডোনিয়া ৩. বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ৪. স্লোভেনিয়া ৫. মন্টেনিগ্রো ৬. সার্বিয়া ৭. কসোভো।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চলা জাতিগত দ্বন্দ্বে ক্রোয়েশিয়া ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৯১ সালে সার্বিয়া ক্রোয়েশিয়ার বিভিন্ন শহরে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। ওই লড়াইয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই ছিল ক্রোয়েশিয়ার নাগরিক। ওই সময় সেখান থেকে ক্রোয়েশিয়ার হাজার হাজার আদিবাসীকে বিতাড়িত করা হয় এবং হত্যা বা গুম করা হয়।

যুগোস্লাভিয়া ভেঙ্গে যাওয়া, জাতিগত দ্বন্দ্ব এবং গৃহযুদ্ধের ইতিহাসের প্রায় পুরোটা জুড়ে রয়েছে গণহত্যা। গণহত্যার খলনায়কদের মধ্যে প্রথম যে তিনজনের নাম আছে তারা হলো স্লোবোদান মিলোসেভিচ, রাদোভান কারাদজিচ এবং রাতকো ম্লাদিচ। উগ্র জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী এই তিন সার্ব নেতার হাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। ইতিহাসের পাতায় এদেরকে একসাথে ‘বলকান কসাই’ নামে ডাকা হয়।

স্লোবোদান মিলোসেভিচ ক্রোয়েশিয়ার হাজার হাজার ক্রোটদের নির্বিচারে হত্যা করে। রাদোভান কারাদজিচ তার শাসনামলে বসনিয়ায় বসবাসরত মুসলিম এবং ক্রোটদের সাথে সার্বদের দ্বন্দ্ব বাঁধান। এ সময়ে সার্ব সেনারা বসনিয়ান মুসলিম এবং ক্রোট নারীদের গণধর্ষণ করে। হাজার হাজার ক্রোট এবং মুসলিম নাগরিককে বন্দী করে ধর্ষণ করা হয়। এই সময়ে জন্ম নেওয়া সন্তানদের কোন পিতৃপরিচয় নাই। বর্তমান ক্রোয়েশিয়ার যুব সমাজের একটা অংশ যারা ফুটবল খেলুড়ে বয়সে আছে তাদের মধ্যে অনেকেই পিতৃপরিচয় বঞ্চিত।

রাতকো ম্লাদিচ ছিলেন বসনিয়া যুদ্ধে বসনিয়া-সার্ব সামরিক অধিনায়ক। তিনি সারায়েভোর গণহত্যায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করার ফলে তাকে আরেকটি গণহত্যার দায়িত্ব প্রদান করেন কারাদজিচ। স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যা জার্মান হলোকাস্টের পর ইউরোপে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ড। রাতকো ম্লাদিচ ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে এই গণহত্যার নেতৃত্ব দেন।

১৯৯৫ সালে গৃহযুদ্ধ থামা যুদ্ধবিদ্ধস্ত ক্রোয়েশিয়া ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো উয়েফা ইউরো প্রতিযোগিতায় খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ১৯৯৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নেয় এবং তৃতীয় স্থান লাভ করে বিশ্ব ফুটবলে সাড়া জাগায়। দলের পক্ষে ডাভর শুকের শীর্ষ গোলদাতার ভূমিকায় অধিষ্ঠিত হন ও বিশ্বকাপের সোনার বুট লাভ করেন।

ক্রোয়েশিয়া ফুটবল দলের ফরোয়ার্ড আন্দ্রে ক্রামারিচের জন্মের চার মাস পর স্বাধীন হয় তাদের দেশ। ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপ দলের খেলোয়াড়দের বেশিরভাগেরই জন্ম স্বাধীনতার কাছাকাছি সময়ে। কেউ আগে, কেউ পরে। দলের সবচেয়ে বেশি ৩৩ বছর যার বয়স সেই গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচের জন্ম যুগোস্লোভিয়া থেকে স্বাধীন হওয়ার ৭ বছর আগে। বাকিরা এক/দুই বছরের আগে পরে।

যুদ্ধবিদ্ধস্ত ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি। ওরা এখনও উন্নয়নের রোল মডেল হতে পারেনি, আমরা হতে পেরেছি। আমরা ওদের থেকে অনেক এগিয়ে- ওরা বিকিনি পরে, আমরা বিকিনি পরি না। ওরা বেহেস্তে যাবে না, আমরা যাবো। আমাদের বেহেস্তে যাবার লাইন ওদের থেকে অনেক বড় হবে।

ছবি
সেকশনঃ সাধারণ পোস্ট
লিখেছেনঃ যুক্তিযুক্ত তারিখঃ 15/07/2018
সর্বমোট 3298 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন