ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

ছোটগল্প: জেসির বান্ধবী মুম্মিতা



ছোটগল্প:

জেসির বান্ধবী মুম্মিতা
সাইয়িদ রফিকুল হক

 
রিক্সা থেকে আলগোছে রাস্তার একপাশে—নীলক্ষেতের মোড়ে তেঁতুলগাছটার নিচে নামলো জেসি। তার মনের মধ্যে আজ তেমন-একটা তাড়াহুড়ার ভাব না থাকলেও সে এখানকার কাজ শেষ করে হাতে একটু সময় ধরে রাখতে চাইছে। সেজন্য সে রিক্সা থেকে নেমে দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করছিল। কিন্তু হঠাৎ তার চোখ গেল রাস্তার ওপারে। আর সে খুব ভালোভাবে দেখলো—রাস্তার ওপাশে মুম্মিতা মিম্মা দাঁড়িয়ে রয়েছে। হঠাৎ তাকে এইমুহূর্তে এভাবে এখানে দেখে তার যেন কিছুতেই বিস্ময়ের ঘোর কাটতে চায় না। তারা দুজন ঢাকার খুব কাছাকাছি আর পার্শ্ববর্তী একটা পাবলিক-বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সাবজেক্টে পড়ে! স্বাভাবিকভাবেই এজন্য তাদের মধ্যে সখ্যতা ও ঘনিষ্ঠতা একটু বেশি।
জেসি নিজের চোখ দুটোকেও যেন এখন কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে চাইছে না! তার মনে হচ্ছে—সে এখন নিশ্চিত ভুলটুল দেখছে! তা নয় তো কী! সে একটু আগেও এই মুম্মিতাকে খুব করে হাতধরে জিজ্ঞাসা করেছিল, “এখন আমার সঙ্গে একটু ঢাকায় যাবি?”
তার একথা শুনে মুম্মিতা স্পষ্টভাবে বলেছিল, “না। আজ আমার সেখানে যেতে ইচ্ছে করছে না।”
কিন্তু এখন? আর কীভাবে সে এতো তাড়াতাড়ি এখানে এলো? জেসির মনের ভিতরে দুরন্ত ভাবনার একটা বিশাল ঝড় বয়ে যেতে থাকে যেন!
 
সে আজ রোকেয়া হলে যাবে বলে আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিল। সেখানে তার সাবজেক্টে পড়ুয়া এক বড়বোন থাকে। তার কাছে ভালো-ভালো কয়েকটি নোট আছে। সামনে তার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষা। সে ভেবেছিল, পরীক্ষার বেশ কিছুদিন আগেই এই নোটগুলো হস্তগত করবে। নইলে, কে-কখন তা নিয়ে যাবে—তার কোনো ঠিকঠিকানা নাই। কিন্তু মুম্মিতাকে এখন রাস্তার ওপাশে একঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার মনে জিদ চেপে গেল। সে রাস্তার ওপারে যাওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠলো। কিন্তু রাস্তায় ট্রাফিক-সিগন্যাল না পড়ায় সে সহজে রাস্তাপার হতে পারলো না। তবুও সে রাস্তাপার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে রইলো।
 
সে কয়েকটি বই কিনবে। তার প্রয়োজনীয় কয়েকটি বই অনেকদিন যাবৎ কেনা হচ্ছে না। কিন্তু এই তাড়াহুড়ার মধ্যে সে বইকেনা আপাততঃ বন্ধ রেখে রাস্তার ওপারে যাওয়ার জন্য লোকজনের সঙ্গে ভিড়ের মধ্যে মিশে গেল। একটু পরে একটা সিগন্যাল পড়তেই সে দ্রুত রাস্তাটা পার হয়ে নিরাপদে নিউ-মার্কেটের দুই-নাম্বার গেইটের পাশে মুম্মিতার একেবারে সামনে এসে দাঁড়ালো।
আর তাকে এভাবে এখানে দেখে মুম্মিতা যেন ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে! তার মুখটা হঠাৎ ফ্যাকাসে হয়ে গেল! আর জেসির মনে হলো—ভূতটুত দেখলেও আজকাল মানুষ এতো চমকায় না!
জেসি তার এই বিবর্ণ চেহারা দেখে তার একটা হাতধরে জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললো, “কী রে, কথা বলছিস না কেন? আর আমাকে দেখে এতো ভয় পেয়েছিস যে! তুই না একটু আগে—ঢাকায় আসবি না বলে ছিলি! হঠাৎ চলে এলি যে! ব্যাপারখানা কী?”
মুম্মিতা এইমুহূর্তে জেসিকে দেখে সত্যি যেন বোবা হয়ে গেছে! আর সে জেসিকে কিছুই বলতে পারে না। সে শুধু মুখভার করে আছে। আর জেসির দিকে ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। আসলে, একটু আগেই সে জেসিকে খুব শক্তভাবে বলেছিল—আজ সে কিছুতেই ঢাকায় যাবে না। ভার্সিটিতে তার জরুরি একটা কাজ আছে। অথচ, সে-ই কিনা জেসির আগে এখানে উপস্থিত হয়েছে!
কিছুক্ষণ পরে সে জেসিকে ম্যানেজ করার জন্য বলে, “না, মানে, এই এমনি! হঠাৎ হলে ভালো লাগছিল না! তো তাই...ভাবলাম এখানে এলে হয়তো কারও সঙ্গে একটু দেখা হয়ে যাবে। আর মনও ভালো হয়ে যাবে! এই আর কী!”
জেসি মুখটিপে হেসে বলে, “নাকি অন্যকিছু?”
মুম্মিতা ও-কে বাধা দিয়ে বলে, “না-না, তেমনকিছু নয় রে। আমার কারও সঙ্গে প্রেমট্রেম নাই। আর ওসবে আমি বিশ্বাসীও নই।”
“কিন্তু আমাকে মিথ্যা বললি কেন?”—জেসি যেন তাকে কিছুতেই ছাড়তে চায় না।
এইসময় মুম্মিতা মনে মনে একটা মিথ্যাঅজুহাত বানাতে চেষ্টা করে। কিন্তু এইমুহূর্তে তার মনের মধ্যে কোনো যুৎসই মিথ্যা তৈরি হলো না। সে মনভার করে বলে, “স্যরি দোস্ত, কিছু মনে করিস না। আমার খুব ভুল হয়ে গেছে। এরকম আর কখনো করবো না।” কথাটা বলে সে একটু হাসবার চেষ্টা করলো। কিন্তু তার সে হাসি যেন কান্নায় পরিণত হলো!
 
জেসি এতোক্ষণে ভালোভাবে লক্ষ্য করলো, মুম্মিতা আজ খুব সুন্দর করে সেজেছে। সে সবসময় সাজগোজ করে থাকে। কিন্তু এখন যেন তাকে আরও বেশি বর্ণিল, আকর্ষণীয় ও লোভনীয় কোনো এক মানবী মনে হচ্ছে! তার মাথায় বাঁধা রয়েছে পোশাকের সঙ্গে ফ্যাশন করে মানানসই খুব পাতলা কাপড়ের হিজাব।
সে আবার মুম্মিতার হাতধরে বললো, “চল, এবার রাস্তার ওপারে যাই। আমি কয়েকটি খুব দরকারি বই কিনবো। তোরও তো বই দরকার। চল, একসঙ্গে দেখেশুনে বইগুলো কিনি। পরে দুজনে তা ভাগ করে পড়তে পারবো।”
মুম্মিতা যেন একটু বিরক্ত হয়ে বলে, “না রে, তুই যা। আমার অন্য একটা জরুরি কাজ আছে। এখন আমি তোর সঙ্গে কোথাও যেতে পারবো না। আমি একজনের জন্য এখানে অপেক্ষা করছি।”
জেসি এবার হেসে বলে, “তা তো আমি আগেই ভেবেছিলাম। একটু আগে তুইইতো ‘প্রেমট্রেম’ করিস না বলে—তা না করে দিয়ে ছিলি। তুই এতো মিথ্যাবাদী কেন রে?”
মুম্মিতা আর-কিছু বলে না। জেসি যে তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে—তাও সে আর খেয়াল করে না। আপনমনে সে কী যেন ভাবতে থাকে। ভীষণ চিন্তাযুক্ত মনে সে বারবার শুধু এদিকওদিক তাকাচ্ছে। আর অন্যমনস্কভাবে নিজের লেডিস ব্যাগ থেকে তার দামি মোবাইলফোনটা বের করে ব্যস্ততার সঙ্গে সময় দেখতে লাগলো।
জেসি তবুও বলে, “আয় না একটু। দুজনে...।”
আর তখনই একটা ফোন এলো মুম্মিতার মোবাইলফোনে। সে ফোনটা রিসিভ করতেই মুখটা তার হাসিতে ভরে উঠলো! আর সে খুব হাসিমুখে বললো, “হ্যাঁ, আমি এখন নিউ-মার্কেটের দুই-নাম্বার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি।”
 
জেসির মনে হলো মেঘের আড়াল থেকে হঠাৎ যেভাবে সূর্য বেরিয়ে আসে ঠিক তেমনই হয়েছে মুম্মিতার মুখের অবস্থা। সে যেন এসবের কিছুই বুঝতে পারে না। বিস্ময়ের ঘোরলাগা চোখে সে এবার ফ্যাল-ফ্যাল করে শুধু মুম্মিতার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আর মুম্মিতা তার ফোনটা ব্যাগে রাখতে-রাখতে তাকে বলে, “তুই না খুব আনাড়ি আর আনস্মার্ট! মানুষের প্রাইভেসিকে সম্মান দিতে শিখিসনি এখনও। তোরা একেবারে গ্রাম্যভূত আর ক্ষ্যাত!”
জেসি হঠাৎ করে মুম্মিতার এই দুর্ব্যবহারের কোনো কারণ বুঝতে পারে না। সে এতে লজ্জা পাওয়ার চেয়ে অপমানবোধ করে বেশি। তাই, সে বান্ধবীকে কিছু-একটা বলার জন্য একটুখানি রেগে ঘুরে দাঁড়াতেই সে দেখলো, একটা খুব দামি গাড়ি মুম্মিতাকে যেন চিলের মুরগীর বাচ্চা নেওয়ার মতো করে ছোঁ মেরে তুলে নিলো! আর চোখের পলকে গাড়িটা কোথায় যেন মিলিয়েও গেল! সঙ্গে সে মুম্মিতার হাসিমাখা মুখটিও একনজর দেখতে পেয়েছিল!
 
 
সে আবার আগের মতো ফ্যাল-ফ্যাল করে শুধু তাকিয়ে রইলো মুম্মিতার অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পথে। এখন তার কোনো কষ্ট নাই। শুধু মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছে!
 
 
 
সাইয়িদ রফিকুল হক
১৫/১২/২০১৯ 

ছবি
সেকশনঃ গল্প
লিখেছেনঃ সাইয়িদ রফিকুল হক১ তারিখঃ 17/03/2020
সর্বমোট 699 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন