ভাল মানুষগুলো মৃত্যু, সমাজ ও পৃথিবী কে জানিয়ে দিয়ে যায় মহাকালের সৃষ্টির কথা।
আত্মীয়, পাড়াপ্রতিবেশির আর্তনাদ যেন এক অর্ণবের ঢেউয়ের মত উত্তাল।
এইভাবে প্রতিটি মানব, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে কাঁদিয়ে আত্মার পরিসমাপ্তি ঘটায়।
আসলে আত্মাটাই কি?
আত্মা হল কোন জীবের অংশ যা কোন শরীর নয়।দেহ যখন জীবিত থাকে, তখন এর ভিতরে একটা আত্মা থাকে। আর মৃত্যুর সময় আত্মা দেহ থেকে বেরিয়ে যায়।
আত্মা মানুষের সাথে কথা বলতে পারে এবং পৃথিবীর যেকোন জিনিস কে বদলে দিতে পারে।
খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করে; স্বর্গ ও নরকে আত্মারা বসবাস করে।
কিন্তু ইসলাম ধর্মে আত্মা কে “রুহ” বলে। রুহ একটি আরবী শব্দ। মুসলিমরা মনে করে প্রতিটি জীবের শরীরের ভিতরে আত্মা বিদ্যমান।
মৃত্যুর সময় রুহ কবজকারী ফেরেশতা আজরাইল জীবের শরীরের ভিতর থেকে আত্মা বের করে নিয়ে যায়।
আর হিন্দুরা আত্মা কে মনে করে চিৎকণা,যা মানুষ, পশু,উদ্ভিদ, জল স্থল, অন্তরীক্ষ সর্বত্র পরিব্যাপ্ত।
কফিলের মৃত্যুর খবর কেউ বা না জানে। বন্ধুদের সাথে নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়ে, সে আর ফিরে আসেনি।
কফিল নবম শ্রেণীর ছাত্র,পড়াশোনা বেশ ভাল।
দেখতেও মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর। তার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবে,সমাজের মানুষকে সেবা করবে।কিন্তু তার স্বপ্ন যে স্বপ্নই থেকে গেল কৈলাসের কাছে।
এটাই বা কে জানতো।
তাই স্বপ্ন দেখতে নেই, যিনি স্বপ্ন দেখায় তিনিই তোমাকে স্বপ্নের চেয়ে বেশি কিছু উপহার দেয়। কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না, আর বুঝলেও তার গুণকীর্তন করি না।
তিনদিন পর তার লাশ পাওয়া গেল বৈরামের চরে।
মা- বাবার কান্না যেন আকাশ বাতাস কম্পিত হচ্ছে।আম গাছের ডাল, কাঁঠাল গাছে তিন জোড়ার মত বাঁকা ডাল তাকে ডাকছে কফিল আসো এখানে, দুল খেলবে না। পড়ার টেবিল আজ কেমন এলোমেলো দেখাচ্ছে, মনে হচ্ছে কতদিন হয় পড়তে বসে না। কফিল এই সব দেখতে পাচ্ছে কিন্তু কেউ তার কথা শুনছে না।
মা বাবার গলাজড়িয়ে কাঁদছে তবু মা বুঝতে পারছেনা। মাকে বলছে কফিল, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, আমি তোমাকে ছাড়া যাবো না। বাড়ির কেউ তার কথা শুনতে পায় না, তাকে খাটিয়ার উপর করে যখন নিয়ে যায় তখন বারবার বলছে আমি যাবো না, আমি যাবো না সেই অন্ধকারে। তার কান্না কেউ শুনতে পারে না।
হে আমার ঈশ্বর আমার আত্মাটাকে আবার পৃথিবীর বুকে ফিরে দাও। আমি দেখতে চাই পূর্ণ বয়স পর্যন্ত কি কি কাজ করতাম এবং আমার স্বপ্নটাকে কিভাবে বাস্তবায়ন করতাম।
এটাই আমার শেষ চাওয়া, এর ফলে তুমি আমাকে স্বর্গ, নরক যাই দাও আমি সেটাই মেনে নিবো।
ঈশ্বর বলল, তুমি সত্যিই দেখবে?
জ্বী……….
তোমার রুহ কে আমি, তোমার বন্ধু পনিরের শরীরের আজ রাতে রূপান্তর করে দিবো।
পনির মানেই তুমি, পনিরের রুহ আমি আজই আমার কাছে নিয়ে আসবো এবং সে আমার যত্নেই থাকবে।
পনির ক্লাসের সবচেয়ে ভাল ছাত্র। এই জন্য সবার সাথে তার ভাল সম্পর্ক। ভাল ছাত্রদের কথা সবাই একটু মনোযোগ সহকারে শোনে। তার মধ্যে পনিরের একটি বিশেষণ আছে,ভাল গান আর কবিতা আবৃত্তি করতে পারে।
এসএসসি পাশ করে ঢাকাতে একটা নামকরা কলেজে ভর্তি হলো। কলেজের হোস্টেল না থাকার কারণে চার বন্ধু মিলে দুই রুমের একটি ইউনিট নিয়ে আপাতত থাকা শুরু করলো।
কিছুদিন পর পাশের ফ্লাটে এক মহিলার সাথে তার ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
মহিলার নাম লতিফা বেগম ঃ দেখতে অনেক সুন্দর, বয়স হয়েছে তবু বোঝা যায় না। দুটি ছেলে তার সাবিত আর মেহির।
দুজনে দু ছাদে প্রায় গল্প করে, হঠাৎ একদিন বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে তাই পনির ছাদে চলে আসতেই দেখে। লতিফা আপা টি-শার্ট পড়ে বৃষ্টিতে ভিজতেছে। পনির কাছাকাছি গিয়ে তার রূপে মুগ্ধ হয়ে গেলো।
বৃষ্টি ভেজা শরীর দেখে পনির একদম হট হয়ে গেল। লতিফা আপার গেঞ্জি ভিজে একদম স্তনের সবকিছু দেখা যাচ্ছে এমন কি পাজামার অবস্থা একই।
লতিফা বলছে কি পনির বৃষ্টিতে ভিজতে কেমন লাগছে।
জ্বী অনেক ভাল লাগছে, বিশেষ করে আপনাকে দেখে আমি তো পুরাই ফিদা।
কেন?
আপনি এতো সুন্দর আগে কখনো, খেয়াল করে দেখি তাই বলছি।
ও তাই বুঝি!
এখন থেকে কি দেখতে চাও?
সুযোগ দিলে অবশ্যই দেখবো, ঠিক আছে কাল বাসায় আসিও কথা হবে।
এই বলে চলে গেল।
লতিফা আর পনিরের একবছর এর দীর্ঘ সময় ধরে এই পরকীয়ার সম্পর্ক।..
…..
লতিফা চিন্তা একবার, চিন্তা করে দেখলো, এই সম্পর্কটা বেশি দিন স্থায়ী করা যাবে না।
পরিবারের সবাই কেমন জানি সন্দেহ করা শুরু করছে। ছয় নয় ভাবতে ভাবতে তার স্বামী মালেক সাহেব কে ফোন করে বলল, আমরা আর এই বাসায় থাকবো না। তুমি যত তারাতাড়ি পারো নতুন একটা বাসা দেখ।বাড়িওয়ালার সাথে তর্ক হয়েছে। মালেক বলল ঠিক আছে, আমি দেখছি বলে ফোনটা রেখে দিল।
এই দিকে পনিরের সাথে লতিফার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ,ফোন, ফেসবুক,।
হঠাৎ করে সব বন্ধ দেখে তিনদিন পর পনির বাসায় গিয়ে দেখে, বাসায় কেউ নেই।
তখন আর পনিরের বুঝতে বাকি রইল না কারণ অনেক আগেই বলেছিল তোমাকে ছেড়ে একদিন আমি হারিয়ে যাবো। সেটাই হল।
এই দিকে প্রিয়ার চলে যাওয়া, পরীক্ষায় চার বিষয়ে ফেল করা নিয়ে পনিরের কোন হতাশাই, মনে কাজ করছে না।
পনিরের ড্রাগ ছাড়া কোন কিছুই ভাল লাগে না।
মদ, গাজা ছাড়া আর কোন চিন্তাই সে করতে পারে না। তার একটাই চিন্তা মদের টাকা সে কিভাবে জোগাড় করবে।
অতিরিক্ত মদ আর গাজা সেবনের কারণে পনির দুইদিন হলো বাসায় অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছে। তাকে দেখার কোন লোক নেই কারণ বাসার সবাই পরীক্ষায় পাশ করেছে বলে যার যার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে শুধু পনির ব্যতিত।রাতে কাঁশি আর বমি করতে করতে তার গলা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে দেখা বা সেবা করার কেউ নেই।
রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় তার আত্মা কে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং কফিল কে বলে।
তোমার কর্মফল এখন তুমি ভোগ করো।
তোমাকে যা দিয়েছিলাম তাই নিয়ে তোমার সন্তুষ্টি থাকা উচিত ছিল।
কফিল ঈশ্বরের কাছে আকুতি -মিনতি করে কান্নায় ভেঙে পড়লো এবং বারবার শুধু ক্ষমাই চাচ্ছে কিন্তু কোন লাভ হলো না।
তোমাকে যা দিয়েছে বা দিবে সেটাই সর্ব উত্তম।
বাড়তি কিছু পাওয়া ও চাওয়া হলো বোকামি।
সমাজের মানুষের চাওয়ার শেষ নেই কিন্তু তার হুকুম পালনে ব্রত নয়।