চোখ রগড়ে ঘুম ভাঙা কুয়াশায় উপত্যকায় দাঁড়িয়ে দেখি
দূরের ভেজা গ্রামগুলো
ধোঁয়া ধোঁয়া সবুজাভ বৃক্ষের গায় স্নিগ্ধ ভোর
তাড়িয়ে নেয় রাতের অন্ধকার
লালচে দিগন্ত উপচানো সূর্যটা উঁকি দিতেই রাখাল যেন হাত ধরে টেনে নেয়,
গেরস্থের ভেড়া গুলো তখন সূর্যের দিকে চালিত ।
বাতাসে শীষের শব্দ বয়ে চলা নদীর কলতান,
অবারিত ফসলের মাঠ পেরিয়ে টেনে নিয়ে চলে গাঁয়ের রাখাল
তারপর সাদা পশ্মি চারপেয়ে বালকেরা শূন্য গির্জার বুকে উঠে এলে
ঢং ঢং ধ্বনিতে বাড়ে ধার্মিকের আনাগোনা,
আর আমার হুঁশ জুড়ে তখন ‘সান্তিয়াগো’ সেই এক রাখাল বালক ।
বলল ‘ঢেউ খেলানো চুলের মেয়ে দেখিনি বহুকাল’
আমি বললাম, ফুস মন্তরে বানিয়ে দেবে বনের রাণী ?
এই বৃক্ষ, এই মেঠো পথ, এই সবুজ পত্রাদি এসবেই যাপন আমার চাই
বললে, জাদুকর হতে পারিনি কখনো, আমি কেবল পালের সাথে ঘুরি
যেতে চাইলে নিতে পারি ঐ দিগন্তরেখার নীচে ওখানে পণ্যের বেসাতি করে বণিক ।
সেই থেকে ছুটছি রাখাল তোমার সাথে আন্দালুসিয়ার দূর প্রান্তর --
কতো গ্রাম নগর শহর, কতো আস্তাবল পেরুতেই ক্লান্ত ঘোড়ার ডাক,
কতো শুড়িখানা ঘিরে বুড়ো ভামেদের মাতলামি
আর কতদূর সান্তিয়াগো ?
দৈত্যাকার এক ভূতুড়ে গাছের নীচেই নাকি জীয়ন মরণ কাঠি আছে !
বললে হেসে, তুমি তো এখন জেগেই আছো, নতুন করে কি জাগাবো!
সাদা সাদা তুলোর মতো উল উড়িয়ে যাচ্ছে হেঁটে গাঁয়ের রাখাল
আমি তখন চুল উড়িয়ে ফুল কুঁড়িয়ে কাঠকুড়ানি গাঁ কিশোরী ।
মরুভুমির স্ফটিক চাঁদে ক্যারাভ্যান টা থেমে রইল এক নগরে
নামতে গিয়ে পায়ের নীচে জলন্ত সব হলদে বালি হঠাৎ দেখি একাই আমি
কোথায় আমার গাঁয়ের রাখাল সান্তিয়াগো – সান্তিয়াগো
গভীর রাতে চমকে দেখি ইজি চেয়ারে দুলছি বসে
হাতে ধরা এলকেমিস্টটি উপুড় হয়ে মেঝের উপর
সবই তবে স্বপ্ন ছিল
নিজেকে আমি তোমার মতো ফিরে পাইনি সান্তিআগো ?