ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

ছন্দ: ছড়া, পদ্য, কবিতা (এক)

উৎসর্গ: অপরিপক্ক কবিকুলকে, যার মধ্যে আমিও পড়ি।

আমরা অনেকেই কবিতা লেখার চেষ্টা করি এবং চেষ্টা করে যা-ই লিখি না কেন তা কবিতা হোক বা না হোক তাকে কবিতা বলে দাবী করার প্রবণতা পোষণ করি। ক্ষেত্রে বিশেষে সেগুলি কবিতা হয়, আবার ক্ষেত্র বিশেষে হয় না। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে দেখেছি ব্লগে যারা কবিতা লেখেন তাদের মধ্যে অনেকেরই লেখা আসলে কোনভাবেই কবিতা হয় না। আমি শুধু মুক্তচিন্তাব্লগের কথা বলছি না। আমার জানাশোনা ও ঢুঁ মারার সকল ব্লগ জগতের কথা সার্বিকভাবে বলছি। 

যে কোন কিছু সৃষ্টি করাটা মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। এর জন্যে চেষ্টা, সাধনা, পড়াশোনা ও অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। অনেকে কবিতা লেখেন তবে তাদের একটা বড় অংশের মধ্যেই এ সাধনার বিষয়গুলি অনুপস্থিত। অনেকে জানার ব্যাপারে আগ্রহীও নন। অনেকে জানেনই না যে, এখানে শুধু লিখলেই হয় না, এ বিষয়ে জানার একটা জগত আছে।

আমার এক বাল্যবন্ধু বন্ধু আছে, কমল সি রয় । সে কবিতা লেখে। সবই ফেসবুকে। প্রতিদিন সে অসংখ্য কবিতা প্রসব করে। ফেসবুকে তার গুণগ্রাহীর অভাব নেই। একটা কবিতা পোস্ট দেবার সাথে সাথে দুশো তিনশো লাইক এবং শ খানেক কমেন্ট পড়ে। কমেন্টগুলিতে যে পরিমাণ প্রশংসা করা হয় তা দেখে আমি লজ্জাই পাই। মূলত আমার বন্ধুটির লেখা কোন কবিতাই আসলে কোনভাবেই কবিতা হয় না, কবিতার ধার দিয়েও যায় না। আমি অনেকদিন তাকে কবিতা লেখার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি, কোন কাজে আসেনি। আমার অরিজিনাল ফেসবুক আইডিতে কোন কিছু লিখলে সেখানে একটাও লাইক পড়ে না। নিক আইডিতে লিখলে কয়েকটা পড়ে। ফলে আমার কথা শুনলে বন্ধুটির লাইক কমেন্ট কমে যেতে পারে সেটিও আমার পরামর্শ না শোনার একটি কারণ। এভাবেই চলছে সাহিত্য চর্চা।  

ছড়া, পদ্য ও কবিতা সার্বজনীন সংজ্ঞায়িত বিষয়। যদি নিজের লেখাকে এই তিন ধরনের মধ্যে যে কোন এক ধরনের যোগ্য হয়েছে বলে দাবী করা হয় তবে সে লেখাটিকে  অবশ্যই নির্ধারিত কোন না কোন সংজ্ঞার মধ্যে পড়তে হবে। যদি না পড়ে তবে তা ছড়া, পদ্য বা কবিতা হয়নি, হয়েছে অন্য কিছু।  যেটি লেখা হয়েছে সেটি হয়তো সাহিত্যের জগতে ইতোমধ্যে সংজ্ঞায়িত অন্য কোন শাখার মধ্যে পড়েছে। আবার এমনও হতে পারে লেখাটি ইতোমধ্যে সংজ্ঞায়িত কোন শাখার মধ্যেই পড়েনি। যদি না পড়ে থাকে তবে কি সেটা কোন লেখা হয়নি? অবশ্যই হয়েছে, তবে তা যা হয়েছে তা ছড়া, পদ্য বা কবিতা নয় অন্য কিছু। সেটির জন্য সাহিত্য জগতে সর্বজনগ্রাহ্য এক বা একাধিক নতুন শাখার নামকরণ করতে হবে।

প্রচলিত সংজ্ঞার মধ্যে না পড়লে তাকে সেই জিনিস দাবী করা খুবই আপত্তিকর একটি বিষয়, এটি অনুচিতও বটে। অনেকে সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়ে প্রচলিত সংজ্ঞাকে ধিক্কার দেন, তর্ক করেন সেটিও কতোটা গ্রহণযোগ্য তাও বিবেচনায় রাখা দরকার। নিজের কোন লেখা প্রচলিত কোন সংজ্ঞার মধ্যে পড়তেই হবে এমনতো কোন দিব্যি দেওয়া হয়নি। লিখেছেন, লেখা হয়েছ, ব্যাস।   

ছড়া, পদ্য ও কবিতা লিখতে গেলে কিছু মৌলিক বিষয় সম্পর্কে খানিকটা জ্ঞান রাখতেই হয়। জানতেই হয় এর মধ্যের গবেষণালব্ধ গোমর। নইলে তা কখনওই সৃষ্টি হয় না, যদি হয়ও তা হবে কাঁকতলিয়, মৌলিক নয়। এমন লেখা লিখে আত্মতৃপ্তি পাওয়াও কঠিন। নিজে যদি না-ই জানি কি লিখেছি তবে তৃপ্তি কেমনে আসবে! কেউ লেখার সমালোচনা করলেও তার যৌক্তিক উত্তর দেওয়া যায় না। কখনও কখনও তর্ক ঠিকই করা হয়, তবে তা অনেকটা তর্ক-প্রলাপ হয়ে যায়; সেখানে যুক্তি থাকে না।  

ছড়া, পদ্য ও কবিতা লিখতে গেলে প্রথমেই যে বিষয়গুলি সম্পর্কে ধারণা রাখা দরকার সেগুলির মধ্যে অন্যতম কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করাই আমার এ সিরিজের উদ্দেশ্য। আমি নিজেও খুব কম জানি। যা জানি সেই সীমাবদ্ধ জ্ঞানকে পাঠকের উদ্দেশ্যে পোস্ট দেওয়ার ধৃষ্টতাকে প্রিয় পাঠকবৃন্দ ক্ষমা করবেন। আপনাদের জানাশোনার বিষয়গুলি এ লেখার সাথে যুক্ত হয়ে বিষয়বস্তুর অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দিতে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা করি।  

প্রথমেই আসি স্বর বিষয়ক আলোচনায়। বাংলা স্বর বা ধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ১. বদ্ধস্বর।  ২. মুক্তস্বর।

বদ্ধস্বর:
যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ মুখের প্রবহমান বাতাসকে আটকে দেয় তাকে বদ্ধস্বর বলে। যেমন : কর, ধর, হায়, পাক, আঁক, ঝাঁক, থাক, দিন, বীণ, হই, ইত্যাদি।

মুক্তস্বর:
যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের প্রবহমান বাতাস জিভের কোনও বাধা ছাড়াই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে তাদের মুক্তস্বর বলে। যেমন: হা, না, কা, চা, দি, দা, বা, বু ইত্যাদি।

একটি শব্দের উদাহরণ দিয়ে যদি আলোচনায় করি তবে হয়ত বিষয়টি সহজে বোধগম্য হতে পারে। একটি শব্দ বেঁছে নিলাম, শব্দটি “করলাম”। শব্দটি দু’টি স্বর দিয়ে গঠিত। প্রথমটি ‘কর’ এবং দ্বিতীয়টি ‘লাম’। বদ্ধ এবং মুক্ত স্বরের সংজ্ঞানুসারে ‘কর’ এবং ‘লাম’  উভয়েই বদ্ধস্বর। তাহলে দেখা যাচ্ছে “করলাম” শব্দটি দু’টি বদ্ধস্বর দিয়ে গঠিত।

আরেকটি শব্দ “সঙ্গোপনে”  নিয়ে আলোচনা করি। এ শব্দটি চারটি স্বর দিয়ে গঠিত সং, গো, প, এবং নে,। এখানে,  সং, বদ্ধস্বর এবং গো, প, ও নে প্রত্যেকটিই মুক্তস্বর। অর্থাৎ সং উচ্চারণের সময় জিভ মুখের প্রবহমান বাতাসকে আটকে দেয় কিন্তু গো, প এবং নে উচ্চারণে জিভ সেটা করতে পারে না, ফলে মুখের ভেতরের বাতাস অনায়াসে বেরিয়ে আসে।

ছন্দের মূল আলোচনায় আসার আগে আরও একটি দিকে লক্ষ্য করা প্রয়োজন। তা হল “মাত্রা”। বলা বাহুল্য যে, ‘স্বর’ সম্পর্কে জানার পর ‘মাত্রা’ সম্পর্কে জানাটা সহজ হয়।
 
বাংলা কবিতার যতো ধরনের ছন্দ আছে তার সবগুলিতেই ‘মুক্তস্বর’  শব্দের যে অবস্থানেই থাকুন না কেন সব সময়েই একটি মাত্রা বহন করে। অর্থাৎ একটি ‘মুক্তস্বর’ সব সময়েই একটি ‘মাত্রা’ । অন্যদিকে একটি ‘বদ্ধস্বর’ কখনও এক মাত্রা আবার কখনওবা দুই মাত্রা বহন করে। এ কারণে  ‘বদ্ধস্বর’ কোন অবস্থায় এক মাত্রা এবং কোন অবস্থায় দুই  মাত্রা বহন করে সেটি জেনে রাখা প্রয়োজন। তবে এ বিষয়ে জানার আগে জানা প্রয়োজন ছন্দের প্রকারদ। নতুবা ছন্দের বিষয়টি বোঝা ও মনে রাখা কঠিন।  (ক্রমশ..)

মূল উৎস: কবিতার ছন্দ, বাংলা একাডেমী, ১৯৯৭ ।। দ্বিতীয় সংস্করণ: মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত, ফেব্রুয়ারী, ২০১১।
কৈফিয়ত: বাংলা একাডেমীর এ লেখাটি বহু ব্লগে হুবুহু প্রকাশিত হয়েছে। এ জন্যে সেগুলিকে উল্লেখ করলাম না। লেখার শুরুতে মূল উৎস উল্লেখ করার দরকার ছিল কিন্তু ভুলে গেছিলাম। যদিও একটা কমেন্টে তা উল্লেখ করেছি তবে সেটি যথেষ্ট নয়। ব্লগার চুপকথা বরাবরেরমত গুতিয়ে আমাকে আবারও বিশুদ্ধ হতে সাহায্য করেছে। তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

এই সিরিজ এর সব লেখা
ছবি
সেকশনঃ সাহিত্য
লিখেছেনঃ যুক্তিযুক্ত তারিখঃ 27/08/2014
সর্বমোট 37172 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন