পর্ব উৎসর্গঃ যুক্তিযুক্ত
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-১)
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-২)
স্যার উইলিয়াম মার্ক টালি
একাত্তর, উত্তাল সারাদেশ। সর্বত্রই মানুষের মুখে শুধু যুদ্ধের আলোচনা,
সচেতন বাঙালি মাত্রই সর্বদা জানতে আগ্রহী ছিল কোথায় কি ঘটেছে আর এর জন্য
সবাই উন্মুখ হয়ে থাকতো একাত্তরের বিবিসিতে একটি কন্ঠ শোনার জন্য। একাত্তরের
বিবিসি মানেই মার্ক টালি। তখনকার দিনে যুদ্ধের আলোচনা উঠলেই অনেকেরই
প্রশ্ন ছিল বিবিসিতে আজ কি বলেছে মার্ক টালি? ধনাঢ্য ইংরেজ পরিবারের সন্তান
মার্ক টালির জন্মস্থান কোলকাতা। বাবা বৃটিশ হলেও মা ছিলেন বাংলাদেশের
নেত্রকোনার মেয়ে। তাইতো বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্ক নাড়ির।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সকাল কিংবা সন্ধ্যায় হারিকেনের টিমটিমে আলো
জ্বেলে রেডিওর এন্টিনার নব ঘুরিয়ে বিবিসিতে কি বলছেন মার্ক টালি তা শোনার
জন্য অধীর আগ্রহে আপেক্ষা করত গোটা বাংলাদেশ। মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় কখন পাক
সেনাদের নাজেহাল করেছে, কোথাও পাওয়ার স্টেশন উড়িয়ে দিয়েছে কিংবা ডুবিয়ে
দিয়েছে যুদ্ধজাহাজ-এরকম চমকপ্রদ আর আশা জাগানিয়া নিত্যদিনের প্রাণবন্ত সব
খবরের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বিবিসির নিউজে হাজির হতেন মার্ক টালি।
১৯৬৪ সালে লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে যোগ দেন বিবিসিতে এবং ১৯৬৫ সালে ওয়ার্ল্ড
সার্ভিসের প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লি এসে শুরু করেন পূর্ব পাকিস্তান
পর্যবেক্ষণ। ১৯৭১ ইং এর ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের
ভয়াবহ দিনগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় মার্ক টালিকে কোন না কোনভাবে পাওয়া গেছে।
ঢাকা থেকে মার্ক টালি, দিল্লী থেকে মার্ক টালি, কোলকাতা শরণার্থী শিবির
থেকে মার্ক টালি, ওয়েস্ট মিনিস্টার থেকে মার্ক টালি, প্রতিদিন সকাল
সন্ধ্যায় ব্রিটিশ পত্র পত্রিকায় বাংলাদেশের যুদ্ধ পরিস্থিতি আলোচনা করেছেন
মার্ক টালি। বাংলাদেশের এই অকৃতিম বন্ধুর জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা।
লিয়ার লেভিন
লিয়ার লেভিন, একজন মার্কিন চলচিত্র নির্মাতা ও চিত্রগ্রাহক। একাত্তরে
তিনি এসেছিলেন বাংলাদেশে, নিজের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে 'বাংলাদেশ
মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা' নামক একটি দলের সাথে সারাদেশে ঘুরে-ঘুরে
তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধের বিরল সব চিত্র। এই দলের সাথে থেকে তিনি প্রচুর ফুটেজ
সংগ্রহ করেন, উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের উপর একটি বাংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধের উপর একটি ডকুমেন্টরি নির্মান করবেন। অর্থের অভাবে তার সেই
ইচ্ছে আর পুরণ হয়নি। লিয়ার অত্যন্ত যত্ন সহকারে সেগুলো তুলে রেখেছিলেন
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। দীর্ঘ বিশ বছর পর তার অপেক্ষার অবসান ঘটে,
বাংলাদেশী চলচিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ নিউইয়র্কে তাকে
খুঁজে বের করে তার তৈরি ৭২ মিনিটের ‘জয় বাংলা’ 'মুক্তির গান' শিরোনামে
নির্মিত হয় যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচিত।
তারেক মাসুদ তার নিবন্ধ সংকলন ‘চলচিত্র যাত্রা’ এ ‘লিয়ার লেভিনঃ আমাদের মুক্তির সারথী’ নামক প্রবন্ধে লিখেছেন- 'শুধু
লিয়ার লেভিনের ফুটেজ নয়, মুক্তির গানের জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্র,
ইংল্যান্ড, কানাডা, ফ্রান্স, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর ফুটেজ সংগ্রহ
করেছি। সেগুলো দেখে মনে হয়েছে লিয়ারের কাজের সামনে লাখো ঘন্টার ফুটেজও কিছু
না। তাঁর ফুটেজ ও সহযোগীতায় মুক্তির গান এর অস্থিমজ্জা দাঁড়িয়েছে।'
লিয়ারকে নিয়ে একটি লেখায় ক্যাথরিন মাসুদ বলেন- “বাংলাদেশ থেকে ফেরার
কয়েক মাস পর লিয়ার তাঁর ফুটেজ নিয়ে টানা এক মাস সম্পাদনা করে প্রায় এক
ঘণ্টার একটি ছবিও দাঁড় করিয়েছিলেন। ‘জয় বাংলা’ নামের এ ছবি ছিল নৈসর্গিক ও
নৃতাত্ত্বিক ধাঁচের। যুদ্ধের পরোক্ষ পটভূমিতে অত্যন্ত মানবিক ভঙ্গিতে তিনি
বাংলাদেশের মানুষের জীবন-চেতনা, উদ্দীপনা আর সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছিলেন।“
আন্দ্রেই আন্দ্রেভিচ গ্রোমিকো
একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের অবস্থান ছিল
আমাদের বিরুদ্ধে এটা সবাই জানে, তখন অন্য পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন কিন্তু
অকুন্ঠ সমর্থন নিয়ে দাঁড়িয়েছিল আমাদের পাশে এবং যুদ্ধে নানাভাবে সহয়তা
করেছিল। রাশিয়ান কূটনীতিক আন্দ্রেই আন্দ্রেভিচ গ্রোমিকো সোভিয়েত ইউনিয়নের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের সংকট সমাধানের জন্য ভারত-পাকিস্তান দু
দেশের মধ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। আন্দ্রেই আন্দ্রেভিচ
গ্রোমিকো জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে বাংলাদেশের
স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো সমর্থন আদায়ে জোর তৎপরতা চালান। তাঁর প্রচেষ্টায়
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক উত্থাপিত যুদ্ধবিরতি
প্রস্তাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো প্রদান করে। এর ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
আরও সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌছে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত ভারতীয়
কূটনীতিকদের পরামর্শে আন্দ্রেই আন্দ্রেভিচ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে
পাকিস্তানের বিপক্ষে জনমত গঠনে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে সবধরনের কূটনৈতিক
সহযোগিতা প্রদান করেন।
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো
আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে জন্ম গ্রহণকারী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ছিলেন
একজন বিখ্যাত বুদ্ধিজীবি, লেখিকা এবং সাহিত্য সমালোচক। তার আরেকটি পরিচয়
ছিল তিনি ছিলেন ল্যাটিন আমেরিকায় নারীবাদী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী এবং
স্পেনিশ ভাষায় প্রকাশিত আর্জেন্টিনার বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা 'সুর'
প্রতিষ্ঠাতা। একাত্তরে লাতিন আমেরিকার আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশের সংহতি
আন্দোলনের সামনের সাড়িতেই ছিলেন এই সাহসী লেখিকা। একাত্তরের ১১ জুন তাঁদের
একটি প্রতিনিধিদল আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেওয়া এক
স্মারকলিপিতে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের জন্য সাহায্য পাঠানোর দাবি
জানিয়েছিলেন। এই দাবিনামায় যাঁরা স্বাক্ষর করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে প্রথমেই
ছিলেন আশি-ঊর্ধ্ব ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর নাম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন খ্যাতনামা
সাহিত্যিক হোর্হে লুইস বোর্হেসসহ আর্জেন্টিনার সেরা লেখক ও শিল্পীদের
অনেকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বিজয়া'- ভিক্টোরিয়ার নামের এই বাংলা প্রতি
শব্দ করেছিলেন কবি নিজে।
বাংলাদেশের সমর্থনে রাজধানী বুয়েন্স আইরেসের একটি মিছিলে পুরোভাগে ছিলেন
তিনি। সেদিন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন- ‘বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে
প্রতি আমার সমর্থন অত্যন্ত স্বাভাবিক। কারন বাংলাদেশের মানুষের ভাষা
বাংলা। বাংলা রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ও ভাষা। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহু সময়
কাটিয়েছেন বাংলার ওই অংশে। সে জন্য এই অঞ্চলের মানুষের সংগ্রামের প্রতি
সহমর্মিতা প্রকাশ আমার কর্তব্য বলে মনে করেছি।‘
আঁদ্রে মালরো
আঁদ্রে মালরো, একজন ফরাসী বুদ্ধিজিবি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়
ফরেন লিজিয়ন গঠন করে বাঙালির প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নিতে চেয়েছিলেন তিনি,
উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বিশ্বজনমতকে। সে সময়ে তিনি প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তার আহবান পশ্চিমা
লেখক ও বুদ্ধিজীবি সমাজে ব্যপক চাঞ্চল্লের সৃষ্টি হয়। তার আহবানে অনেকই
পাকিস্তানী বর্বরতার প্রতিবাদ করেন । বিশ শতকের বিশিষ্ট লেখক ও ফ্রান্সের
দ্য গল সরকারের একসময়ের মন্ত্রী আঁদ্রে মালরো সম্পর্কে পেছনে ফিরে গিয়ে
আরও বলতে হবে যে তিনি ফ্রান্সে ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলনে এবং স্পেনের
গৃহযুদ্ধে প্রগতিশীলদের পক্ষে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধে মালরোর যে লড়াই, ‘স্বাধীনতা’ শব্দটির জন্য মৃত্যুর আগে তাঁর
শেষ লড়াই।
১৯৭৩ সালের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে সদ্য স্বাধীন
বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলেন সত্তরোর্ধ্ব এই ফরাসি যোদ্ধা, বিমান থেকে
বাংলাদেশে নেমেই পুষ্পসিক্ত অভিনন্দনের জবাবে আর্দ্র হলো আঁদ্রে মালরোর
কণ্ঠ, ‘সবাইকে তো বুকে টেনে নেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। পুরো বাংলাদেশকে আমি আমার বুকে জড়িয়ে ধরছি।’
২১ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের বক্তৃতায় তিনি
বলেন- ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, আজ আমি প্রথমবারের মতো এখানে কথা
বলছি। এটা পৃথিবীর একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে জীবিতের সংখ্যা মৃতের
চেয়ে কম। ফ্রান্সের সব শিক্ষার্থী জানে, আপনাদের শিক্ষক ও সহপাঠীরা
স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। পৃথিবীর আর কোথাও ছাত্র-শিক্ষকেরা
স্বাধীনতার জন্য এত কঠিন ত্যাগ স্বীকার করেননি। তাই আপনারা যাঁরা যুদ্ধ
করেছেন, ভবিষ্যতের শিক্ষার্থীদের আপনারা এটা বলতেই পারেন, আমরা খালি হাতে
যুদ্ধ করেছি।‘
ইন্দিরা গান্ধী
‘ভারতের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সাহায্য বৃদ্ধি করা ছাড়া গত্যন্তর নেই’-
হেনরি কিসিঞ্জারের মুখের উপর এমন কথা বলার মত উদার মানসিকতা তৎকালীন সময়ে
একজনেরই ছিল এবং তিনি সেটা করে দেখাতেও পেরেছিলেন। তিনি আর কেউ নন, ভারতের
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ইন্দিরা গান্ধীকে নতুন করে পরিচয়
করিয়ে দেবার কিছুই নেই, এই নামটি প্রতিটি বাঙালির কাছে একটি পরিচিত নাম
কিন্তু একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের কথা বলার অবশ্যই
প্রয়োজন আছে।
সেই ভয়াবহ বিভীষিকাময় পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচতে লাখ লাখ শরনার্থী
পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা
গান্ধী ৯৮,৯৯,৩০৫ জন উদ্বাস্তুকে তাঁর দেশে আশ্রয় দেন, তাদের থাকা খাওয়া
চিকিৎসা সহ অন্যান্য সাহায্যও করেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থীর সংখ্যা
ছিল সবচে বেশি। পরম মমতায় ঠিক যেন এক মা তার সন্তানের মতন সেদিন বিপর্যস্ত
শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ালেন এবং দেশবাসীকে সহায়তা করার অনুরোধ করলেন। থাকা
খাওয়ার ব্যবস্থাই শুধু নয় তিনি সহজ সরল আর নিরস্ত্র বাঙালিকে সাহস যোগাতে
লাগলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেন। ঘুরে
দাঁড়ালো বাঙ্গালী। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ পেয়ে সেই সব বাঙ্গালী
সশস্ত্র অবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে ঝাপিয়ে পড়লো হায়না পাক বাহিনীদের
উপর।
একাত্তরের ১৩ এপ্রিল তিনি বলেন- ‘পূর্ব বাংলা যা ঘটেছে, তাতে ভারত সরকার
নীরব থাকবেনা।‘ ১৭ই মে পশ্চিমবঙ্গে এসে রাজ্য সরকারকে আশ্বস্ত করেন এবং
বলেন- ‘শরনার্থী বিষয়ে কেন্দ্র তাদের পাশে থাকবে’। একাত্তরের ৩০ এপ্রিল
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব
দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করতে ইচ্ছুক বাংলাদেশী
তরুণদের সশস্ত্র ট্রেনিং দানের দায়িত্বও দেয়া হয় তাদের। সেই সাথে তিনি
সারা বিশ্বে পাকিস্তানীদের নির্মম, নিষ্ঠুর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের চিত্র তুলে
ধরে বিশ্ববাসীকে আহবান জানান বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়াতে। তাঁর দুর্লভ
ব্যক্তিত্ব এবং কূটনৈতিক দক্ষতার জোরে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তার পক্ষে সমর্থন
দিতে থাকেন।
একাত্তরের মাঝামাঝি সময়ে বেলগ্রেডের রাজধানী বুদাপেস্টে বিশ্বশান্তি
কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এ সন্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ বিষয়ে
সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা পুর্ণব্যক্ত করেন। এক বার্তায় ইন্দিরা গান্ধী
বলেন- ‘পূর্ববঙ্গের ঘটনায় ভারতের পক্ষে উদাসীন থাকা কঠিন এবং ইতোমধ্যে ২০
লাখ শরনার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। এসব উদ্বাস্তু যাতে সম্মানের সঙ্গে
দেশে ফিরতে পারে সেজন্য পাকিস্তানকে বাধ্য করতে হবে।'
বাংলাদেশের লাখ লাখ শরণার্থীকে সেবাযত্ন করায় ইন্দিরা গান্ধীর এ কাজকে
যীশুখৃষ্টের কাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন নোবেলজয়ী মাদার তেরেসা। ‘তারা সবাই
ঈশ্বরের সন্তান’ শীর্ষক একটি বইয়ে তেরেসা এ বিষয়টি উল্লেখ করেন। ইন্দিরা
গান্ধী আজ পৃথিবীতে নেই, কিন্তু আমরা আজও চিত কৃতজ্ঞ এই মহীয়সী নারীর
প্রতি।
চলবে....