ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-৭)

পর্ব উৎসর্গঃ দুরন্ত দুরা

সিরিজটা শেষ করতে চেয়েছিলাম এখানেই। কিন্তু আমাদের দুঃসময়ের সারথি বন্ধুদের  তালিকা এতটাই লম্বা  যে, এই পর্বগুলোতে আলোচনায় আসা বন্ধুদের বাইরে আরও অনেক বন্ধু আছেন যাদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা না করলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধার দেখানোটা অসম্পুর্ণ থেকে যাবে। সেই লক্ষ্যেই ব্লগের সহযোদ্ধারা চাইলে সিরিজটা চালিয়ে যাবার ইচ্ছে আছে তবে আপাতত কিছুদিন অফ থাকবে...

সিনেটর উইলিয়াম বি স্যাক্সবিকে জন রোহ্ড

একাত্তরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ইউএসএআইডির ডাক্তার হিসেবে কর্মরত জন ই রোহ্ড ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সিনেটর স্যাক্সবিকে যে চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন তা কাঁপিয়ে দিয়েছিল সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রকে। সেই চিঠিটি সিনেটে উপস্থাপিত হয় ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল। চিঠিটিতে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ সাধারণ জনগণের উপর পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক চালানো নির্বিচারে গণহত্যার চিত্রটি অত্যন্ত সুচারুভাবে ফুটে ওঠে। তার চিঠির সংক্ষিপ্ত রুপ এখানে তুলে ধরা হল-

২৫ মার্চ মধ্যরাতে আমি ও আমার স্ত্রী ছাদের ওপর থেকে দেখতে পেয়েছি ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্যাংক বের হয়ে আসছে, দেখেছি কামান ও মর্টারের গোলার আগুনের লাল শিখা। গোলা বর্ষণ করা হয়েছে জনবসতিপুর্ণ বস্তি ও বাজার এলাকায়। টানা দুইদিন ধরে অবিরাম মেশিনগানের গুলিবর্ষণ আর প্রচণ্ড বিস্ফোরণ শেষে যখন কারফিউ ভাঙল, আমরা বের হয়ে শহরের রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে এগোতে থাকলাম। পথে দেখলাম, রেললাইনের পাশের সারি সারি ঝুপড়ি ঘরগুলো আগুনে পোড়া। আমাদের কাছাকাছি বসবাস করা এক বাঙালি বন্ধুর ভাষ্যমতে, সেনাসদস্যরা ওখানে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে আর যখন একটি পরিবার বাঁচার জন্য ছুটে বের হয়ে আসছিল, তখন তাদেরকে কুকুরের মতো গুলি করে মেরেছে। আমরা তাকেসহ ১২ জনের আরেকটি পরিবারকে আমাদের বাসায় আশ্রয় দিতে চাইলে তিনি রাজি হয়ে গেলেন। পুরোনো ঢাকার নয়াবাজারে হিন্দু ও মুসলমান বেশকিছু কাঠমিস্ত্রীরা কাজ করত, সেখানে এখন কিছু পোড়া লোহার পাত ও আগুনে ঝলসে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ। শাঁখারি বাজারের হিন্দু দোকানদার ও কারিগর যারা তখনো বোমার ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে জীবিত ছিল, মরিয়া হয়ে আমার কাছে সাহায্য চাইল- তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেনাবাহিনী ঐ এলাকায় আক্রমণ চালায়। একজনের পেটে গুলি লাগে, আমরা পৌঁছার মাত্র আধঘণ্টা আগেই সে মারা যায়। অন্যরা রাস্তায় পড়ে আছে। ঢাকা ছেঁড়ে আসার আগের দিন শাঁখারি বাজার এলাকায় গিয়ে দেখলাম, হিন্দুদের বাড়ির ওপর উর্দু হরফে মুসলমানদের নাম লিখা.

মার্চের ২৯ তারিখ সকালে আমরা রমনা কালীবাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ঢাকার কেন্দ্রে রমনা রেসকোর্সের ভেতর এই পুরোনো গ্রামটিতে বসবাস করত প্রায় আড়াই’শ মানুষ। দেখতে পেলাম, মেশিনগানের গুলিতে ও আগুনে পোড়া পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের স্তূপ। সে দিনই অতি ভোরে তাদের হত্যা করা হয়েছে, আমি ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর এ দৃশ্যের ছবি তুললাম। সদরঘাট, শাঁখারিপট্টি, রায়েরবাজার, নয়াবাজার ও ঠাঁটারি বাজারে হাজার হাজার মানুষের বাড়িঘর, ভিটি পর্যন্ত পোড়া। ২৯ তারিখে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার জগন্নাথ হল ও ইকবাল হলের মধ্য দিয়ে হেঁটে গেলাম। সর্বত্র ধ্বংসের চিহ্ন, সেনাবাহিনীর ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। জগন্নাথ হলের বসবাসকারী সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। যেদিক দিয়ে ট্যাংক গিয়েছে সর্বত্র ধ্বংসের চিহ্ন, এক জায়গায় ভাঙা দেয়াল চোখে পড়ল। হলের সামনে ট্যাংক চলাচলের চিহ্ন এবং গণকবর। একজনের সঙ্গে কথা হলো, তাকে মৃতদেহ টেনে বের করতে বাধ্য করা হয়েছে, তিনি এক কবরেই গুণেছেন ১০৩ জনের লাশ। বাইরে ডর্মিটরির দেয়ালে বড় বড় ছিদ্র, ভেতরে রুমে রুমে তখনো ধোঁয়া উড়ছে আর মেঝেগুলো রক্তাক্ত। আমরা ইকবাল হলেও ট্যাংক আক্রমণের চিহ্ন দেখলাম, সেখানে মৃতদেহগুলো পড়ে আছে, তখনো কবর দেওয়া হয়নি। পরের দুই সপ্তাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ অধ্যাপকসহ পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে নিধন করা হলো। তাঁদের মধ্যে রয়েছে দর্শন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জি সি দেব,  পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, ইতিহাস বিভাগের প্রধান ড. আলী, ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, এবং ড. নাকভি.

১লা এপ্রিল খুব ভোরে ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরায় কামানের গোলাবর্ষণ চলে। সন্ত্রস্ত ঢাকা শহর থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রায় লক্ষাধিক মানুষ তখন জিঞ্জিরায়। রেডিও পাকিস্তান ক্রমাগত বলতে থাকে- ঢাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। কিন্তু আমরা দেখলাম প্রায় জনশূন্য একটি শহর.

পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি জনগনের ওপর যে অনৈতিক আঘাত করেছে এবং অনবরত করে যাচ্ছে, সে সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে কোনো ধরনের বিবৃতি না দেওয়াতে মনে হচ্ছে তারা বরং এদের সমর্থনই করছে। আমাদের পাকিস্তানী বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে করে উঠিয়ে আনা হয়েছে। এ জাহাজ বোঝাই পাকিস্তানি সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম নামানোর পর আমাদের উঠানো হয়। এখানে নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানে কাজে লাগানো হচ্ছে আমেরিকার পাঠানো সাহায্য.

বাঙালিদের ওপর এই অকথ্য অত্যাচার বন্ধ করা কিংবা এই বর্বরতম সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করার শক্তি আমাদের সরকারের নেই- এটা সম্পুর্নভাবে মেনে নিলেও পূর্ব পাকিস্তানের এই সাড়ে সাত কোটি মানুষকে যে অমানবিক আচরণের শিকার হতে হচ্ছে, শুধু তার নিন্দা জানানোর জন্যও অন্তত আপনি কংগ্রেস এবং প্রেসিডেন্টের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাবেন, এ আমার অনুরোধ.

কোনো রাজনৈতিক হিসাব নিকেষই মানবিক মূল্যবোধের চেয়ে বেশী কিছু হতে পারে না, মানুষের ব্যক্তি জীবনের মূল্য সরকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আমেরিকার আস্থা পুনর্বিবেচনা করতে হচ্ছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত যে দলের পেছনে পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা ৯৮ শতাংশ জন মানুষের সমর্থন আছে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সেই দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। যারা নিজেদের গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দাবী করে, এই ধরনের ঘটনায় সে সব দেশের অগ্রণী ভূমিকা থাকার কথা। আমাদের আরজি, পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক জনগণের এ মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে আপনি ব্যক্তিগতভাবে ভূমিকা রাখুন.


থিওডোরা ফস্টারের খোলা চিঠি

একাত্তরের ১২ই আগস্ট অক্সফাম আমেরিকার নির্বাহী পরিচালক থিওডোরা ফস্টার ভারতে আশ্রয় নেয়া তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানী শরণার্থীদের সহায়তার জন্য যে খোলা চিঠি লেখেন, তা মানবিক সহায়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এই চিঠিটিই পরবর্তীতে প্রচারপত্র হিসেবে বিলি করা হয়। চিঠিটির বক্তব্য তুলে ধরা হল-

প্রিয় বন্ধু,

মনে করুন, ৭০ লাখ আমেরিকানসহ আপনাকে (নিউইয়র্ক সিটির প্রায় সবাই) হঠাৎ পালিয়ে সীমান্ত পার হয়ে মেক্সিকো চলে যেতে হলো। সঙ্গে কিছু কাপড় ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই। আপনি কি বেঁচে থাকতে পারবেন অন্য কারো সাহায্য ছাড়া? আর আপনি কি প্রত্যাশা করেন যে মেক্সিকো একা আপনাদের সবার দায়িত্ব নিতে পারবে?

ভারতে পূর্ব পাকিস্তানী শরণার্থীদের মাঝে এখন এই রকমই একটি অবস্থা চলছে। বাঁচার তাগিদে মরিয়া হয়ে ওঠা এইসব শরণার্থীদের খাবার, আশ্রয় ও জরুরি প্রয়োজনীয় চিকিত্সা সেবা প্রদানের যে দায়িত্ব ভারত সরকারের কাঁধে চেপেছে তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করছে তা বহন করার; কিন্তু একা ভারতের পক্ষে তো এই বোঝা সামলানো সম্ভব না। আমরা যারা ধনশালী দেশের অধিবাসী, ক্ষুধা ও রোগব্যধির কারণে মৃত্যুর হাত থেকে হাজার হাজার নিরপরাধ শিশু ও বৃদ্ধ মানুষকে বাঁচাতে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি। অনেক আমেরিকান, কানাডিয়ান ও ব্রিটিশ জনগন অক্সফামের মাধ্যমে তাঁদের সাহায্য পাঠাতে এগিয়ে এসেছেন। অক্সফাম একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠান দুর্যোগকবলিত মানুষকে সহায়তা দিয়ে আসছে ১৯৪২ সাল থেকে। অক্সফাম কথা দিচ্ছে, আপনার পাঠানো ডলারটি এই বিপদে অনেক বেশি ব্যবহৃত হবে। আপনার চেকটি অনুগ্রহ করে অক্সফাম-আমেরিকা, স্যুট ৫০৯, ১০২৮, কানেক্টিকাট এভিনিউ, এনডব্লিউ, ওয়াশিংটন ডিসি-২০০৩৬ ঠিকানায় পাঠান। আপনার এ সাহায্য করমুক্ত।

সত্যিকার অর্থেই এখন জীবন ও মৃত্যুতে আপনার ভূমিকা অনেক। অনুগ্রহ করে আপনার হাতে কলম তুলে নিন এবং জীবন বাঁচাতে আপনার ভোট দিন.

আপনার একান্ত

থিওডোরা সি ফস্টার

এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর


জন হ্যাস্টিংস ও জন ক্ল্যাপহ্যাম

ভারতের কলকাতার সদর স্ট্রিট মেথোডিস্ট চার্চের রেভারেন্ড জন হ্যাস্টিংস ও রেভারেন্ড জন ক্ল্যাপহ্যাম যৌথভাবে দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশের জন্য সম্পাদককে চিঠি লেখেন। ২৭ মে, ১৯৭১ চিঠিটি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয়। 

চিঠিটির বক্তব্য অনেকটা এরকম -

মহোদয়,

স্বল্প সময়ে অনেক সুন্দর গল্পের পেছনে ছুটতে থাকা কোন প্রতিবেদক আমরা নই। আমরা প্রত্যেকেই ২০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করে আসছি। এখানে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে শত শত সাধারণ শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। পূর্ব পাকিস্তানে কী ঘটছে তার একটি ছবি আজ আমাদের কাছে সন্দেহাতীতভাবে পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। ফায়ারিং স্কোয়াড থেকে নেহাৎ ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া অনেকেই আছেন। শত শত সাক্ষী আছেন যারা নিজ চোখে মেশিনগানের গুলিতে হত্যা করতে দেখেছেন অনেককে  যাদের মধ্যে আছেন-রাজনৈতিক নেতা, অধ্যাপক, চিকিত্সক, শিক্ষক ও ছাত্ররা। দিনের আলোয় কিংবা রাতের অন্ধকারে যখন খুশি গ্রাম ঘেরাও করা হয়েছে, ভীত সন্ত্রস্ত গ্রামবাসী যে যেখানে সম্ভব পালিয়েছে, নতুবা তাদের যেখানে পাওয়া গেছে, সেখানেই হত্যা করা হয়েছে, কিংবা তাদের মাঠে ধরে এনে রীতিমতো কচুকাটা করা হয়েছে। নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে আর মেয়েদের উঠিয়ে নিয়ে গেছে ব্যারাকে, নিরস্ত্র কৃষককে লাঠিপেটা করা হয়েছে, কখনো বেয়নেটে দিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয়েছে.

সাত সপ্তাহ পরও অবস্থা অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে। এমনকি সবচেয়ে অবিশ্বাস্য গল্প- ভীতসন্ত্রস্ত্র শিশুদেরকে ধরে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচানো কিংবা নারীদেরকে নগ্ন করে বেয়োনেট দিয়ে লম্বালম্বি চিঁড়ে ফেলা কিংবা শিশুদের শরীরকে টুকরো করা- এগুলো সত্য; এজন্য নয় যে লোকজন এসব ঘটনা বলেছে, কারণ যারা বলেছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে গল্প বানানোর মতো উদ্দেশ্য তাদের নেই। আমরা হাত কেটে ফেলা মা এবং পা কাটা শিশুও দেখেছি। এসব ঘটনা ঘটেছে সীমান্ত থেকে বেশ কিছুটা দূরে। তাদের বুলেটের ক্ষতগুলোতে গ্যাংগ্রিন হয়ে গেছে, অনেকেই চোখের সামনে নিজের মেয়েকে ধর্ষিত হতে দেখেছেন এবং তাদের শিশুদের মাথা গুঁড়িয়ে যেতেও দেখেছেন। কেউ দেখেছেন স্বামী, সন্তান ও নাতিকে কবজিতে বেঁধে গুলি করতে- এটা ছিল বাছাই করে শক্ত সামর্থ্য পুরুষদের শেষ করে দেয়ার একটি প্রক্রিয়া.

কোনো কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধও বনগাঁ হাসপাতালের সেই মেয়েটিকে শান্ত করতে পারবে না, প্রলাপের ঘোরে সে চিত্কার করে কাঁদছে আর বলছে- ‘ওরা আমাদের সবাইকে হত্যা করবে, ওরা আমাদের সবাইকে হত্যা করবে।‘ তার পাশেই কাঁপছে আরেকটি মেয়ে- দিনভর ধর্ষণের পর ওরা তার গোপনাঙ্গ বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়েছে। ভারতে আসার পথে প্রায় ৪০০ জনকে মারা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, তাদের ঘেরাও করে হত্যা করা হয়েছে। কেন? পাছে তাদের নির্যাতনের কাহিনী ভারতে পৌছে যায়? অথবা শেখ মুজিবের নেতৃত্বে একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে নেওয়ার কারণে সে দেশে বসবাস করার অধিকার হারানো ?

সবচেয়ে ভীতিকর উদ্যোগটি সম্ভবত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা। ফার্স্ট ব্যাটালিয়নে কয়েকজন গুলিবৃষ্টির মধ্য থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে- গুলি করেছে তারাই, যারা আগের দিন তাদের সাথে এক মেসের বাসিন্দা ছিল। এটা ছিল সমগ্র পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার একেকটি দৃষ্টান্ত। এই ক্রোধ আসলে বছরের পর বছর ধরে সঞ্চিত ঘৃণার ফসল। শোষণ হয়ে উঠেছিল তাদের মজ্জাগত চর্চা। চাল পশ্চিম পাকিস্তান থেকে দ্বিগুণ দামে কিনতে হতো পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে। মুজিবের অনুসারীরা গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত ছিল। ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টিতেই তাকে ম্যান্ডেট দিয়েছে। ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টোর এই ফলাফলের অপমানটা হজম হল না.

এটা কি ভারতের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হবে? এটা অন্য যে কোনো দেশের সমস্যার মতই, ভারতের জন্য তার চেয়ে বেশি কিছু হওয়ার কথা নয়। পশ্চিম কী করছে? আসল খেলা তো শেষ হয়ে গেছে। ত্রাণ সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার তহবিল কে দেবে? এর জন্য প্রচারণা চালাবে কে? রাজনৈতিক জটিলতা কি মুখে গজ ঢুকিয়ে দিয়েছে? কোন সরকার বা কোন ব্যক্তির কি সেই কণ্ঠস্বর নেই, যা এই অসহায়, বিপর্যস্ত মানুষদের জন্য উচ্চারিত হবে? এমন কোনো বিবেক কি নেই, যা শোনাবে পারবে একটি সৃষ্টিশীল উত্তর !!

(রেভ) জন হ্যাস্টিংস

(রেভ) জন ক্ল্যাপহ্যাম

সদর স্ট্রিট, মেথোডিস্ট চার্চ, কলকাতা.


চলবে...


যাদের কাছে কৃতজ্ঞঃ

১. ইন্টারনেট – ছবি ও বিভিন্ন তথ্যের জন্য

২. দৈনিক পত্রিকাঃ প্রথম আলো (একাত্তরের চিঠি), সমকাল

৩. ১৯৭১ বন্ধুর মুখ শত্রুর ছায়া-হাসান ফেরদৌস

৪. সোহরাব হাসান সম্পাদিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশীদের ভূমিকা

৫. অমি রহমান পিয়াল

৬. মফিদুল হক (লেখক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি)


আগের পর্বগুলিঃ

একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-১)
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-২)
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-৩)
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-৪)
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-৫)
একাত্তরের বিদেশী বন্ধুগণঃ আমাদের দুঃসময়ের সূর্যসারথি (পর্ব-৬)

ছবি
সেকশনঃ মুক্তিযুদ্ধ
লিখেছেনঃ নিভৃত স্বপ্নচারী তারিখঃ 11/07/2013
সর্বমোট 2645 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ