ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

বাংলা ভাষার প্যাঁচ-ঘোচঃ দন্ত-স ও মূর্ধন্য-ষ ব্যবহারের সংক্ষিপ্ত ছহি তরিকতনামা (তৃতীয় পর্ব)

উৎসর্গঃ জটিল বাক্য, সত্যজিৎ দাস, অনিমেষ রহমান, ফরহাদ হোসেন, নিভৃত স্বপ্নচারী, হাহা, পৃথু সন্যাল, ফিদা; যাদের লেখার রূপ-রঙ ও নিয়ন্ত্রণ আমাকে অণুপ্রাণীত করে।  

বাংলা ভাষা তিনটি স/ষ/শ আছে যার উচ্চারণ মূলত একই রকম। এর একটিকে বলে দন্ত্য-স। এটি উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ দাঁত বা দন্ত স্পর্শ করে বলে একে দন্ত্য-স বলে।

আরেকটি উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ মুখ গহব্বরের ছাঁদ বা তালুর সামনের দিকে দাঁত বা দন্তমূলের উপরিভাগ যাকে মূর্ধ বলে সেখানে স্পর্শ করে বলে একে মূর্ধন্য-ষ বলে।

আরেকটি উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ মুখ গহব্বরের ছাঁদ বা তালু এবং দাঁত বা দন্ত স্পর্শ করে বলে একে তালেব্য-শ বলে।

কোন শব্দে দন্ত্য-স বসবে এবং কোথায় মূর্ধন্য-ষ বসবে তা কতগুলো নিয়ম মেনে চলে। এই নিয়মসমূহকে ষত্ব বিধান বলে। তালেব্য-শ এর ব্যবহারকে কোন নিয়মের মাধ্যমে বর্ণনা করা কঠিন। এটিকে পন্ডিতেরা যেভাবে ব্যবহার করেছেন, সেভাবেই চলে আসছে। তবে বিদেশী ভাষার ক্ষেত্রে সাধারণতঃ তালেব্য-শ হয়। যদিও এটি স্বতসিদ্ধ নয়। যেমন- এ্যাকশন, প্রমোশন ইত্যাদি।   

ষত্ব বিধানের কয়েকটি নিয়মঃ

১. অ, আ, বাদে অন্য স্বরবর্ণ, ক এবং র বর্ণের পরের প্রত্যয়াদির দন্ত্য-স সাধারণত মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন- ভবিষ্যৎ, পরিষ্কার, মুমূর্ষ।

২. ‘অতি’, ‘অভি’ এমন শব্দের শেষে ই-কার উপসর্গ এবং ‘অনু’ আর ‘সু’ উপসর্গের পরে কতগুলো ধাতুর দন্ত্য-স এর মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন- অতিষ্ঠ, অনুষ্ঠান, নিষেধ, অভিষেক, বিষণ্ন(‘ণ্ন’
মূর্ধ-ণ পরে দন্ত্য-ন, সুষম।

৩. নিঃ, দুঃ, বহিঃ, আবিঃ, চতুঃ, প্রাদুঃ এ শব্দগুলোর পর ক্, খ্, প্, ফ্ থাকলে বিসর্গ (ঃ) এর জায়গায় মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন-

নিঃ + কাম > নিষ্কাম

দুঃ + কর > দুষ্কর,

বহিঃ + কার > বহিষ্কার

নিঃ + পাপ> নিষ্পাপ।


৪. কিছু শব্দ স্বভাবতই মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন- আষাঢ়, নিষ্কর, পাষাণ, ষোড়শ ইত্যাদি।

৫. কতগুলো শব্দ বিশেষ নিয়মে মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন- সুষুপ্তি, বিষম, বিষয়, দুর্বিষহ, যুধিষ্ঠির ইত্যাদি।

৬. কোথাও কোথাযও ষত্ব বিধান খাটে না। যেমন ‘সাৎ’ প্রত্যয়ের দন্ত্য-স কখনও মূর্ধন্য-ষ হয় না। যেমন- ভূমিসাৎ, ধূলিসাৎ, আকস্মাৎ।

৭. খাঁটি বাংলা ও বিদেশী শব্দে মূর্ধন্য-ষ হয় না। যেমন- টেক্স, পুলিশ, জিনিস, মিসর, গ্রিস, স্টেশন, মুসাবিদা।

৮. অঃ বা আঃ থাকলে তার পরে ক্, খ্, প্, ফ্ সন্ধিযুক্ত হলে বিসর্গ (ঃ) এর জায়গায় দন্ত্য-স

হয়। যেমন-

পুরঃ + কার = পুরস্কার

ভাঃ + কর = ভাস্কর

তিরঃ + কার = তিরস্কার

পরঃ+ পর= পরস্পর

স্বতঃ + ফূর্ত= স্বতঃস্ফূর্ত


৯. অঃ বা আঃ থাকলে তার পরে ক্, খ্, প্, ফ্ ছাড়াও ত থাকলেও স হতে পারে। যেমন-

মনঃ+ তাপ = মনস্তাপ

শিরঃ + ত্রাণ= শিরস্ত্রাণ

 

প্যাঁচালীঃ সহব্লগারদের বলি, বিধান-ফিধান, ছহি তরিকতনামা সব হজম কইরা ফ্যালান। যে কয়ডা বানান এইহানে দিছি যুক্তিযুক্তের উপরে ভরসা কইরা সেইগুলান সংগ্রহে রাহেন। ভবিষ্যতে ক্যাঁচাল বাঁধলে কামে দিবো।

(চাইলে চলবে, না চাইলে থামবে)

এই সিরিজ এর সব লেখা
ছবি
সেকশনঃ সাধারণ পোস্ট
লিখেছেনঃ যুক্তিযুক্ত তারিখঃ 26/09/2013
সর্বমোট 13947 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ

সর্বোচ্চ মন্তব্যকৃত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

এই তালিকায় একজন লেখকের সর্বোচ্চ ২ টি ও গত ৩ মাসের লেখা দেখানো হয়েছে। সব সময়ের সেরাগুলো দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন