উৎসর্গঃ জটিল বাক্য, সত্যজিৎ দাস, অনিমেষ রহমান, ফরহাদ হোসেন, নিভৃত
স্বপ্নচারী, হাহা, পৃথু সন্যাল, ফিদা; যাদের লেখার রূপ-রঙ ও নিয়ন্ত্রণ আমাকে অণুপ্রাণীত
করে।
বাংলা ভাষা তিনটি স/ষ/শ আছে যার উচ্চারণ মূলত একই রকম। এর একটিকে বলে
দন্ত্য-স। এটি উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ দাঁত বা দন্ত স্পর্শ করে বলে একে দন্ত্য-স
বলে।
আরেকটি উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ মুখ গহব্বরের ছাঁদ বা তালুর সামনের
দিকে দাঁত বা দন্তমূলের উপরিভাগ যাকে মূর্ধ বলে সেখানে স্পর্শ করে বলে একে মূর্ধন্য-ষ
বলে।
আরেকটি উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ মুখ গহব্বরের ছাঁদ বা তালু এবং দাঁত
বা দন্ত স্পর্শ করে বলে একে তালেব্য-শ বলে।
কোন শব্দে দন্ত্য-স বসবে এবং কোথায় মূর্ধন্য-ষ বসবে তা কতগুলো নিয়ম মেনে
চলে। এই নিয়মসমূহকে ষত্ব বিধান বলে। তালেব্য-শ এর ব্যবহারকে কোন নিয়মের মাধ্যমে বর্ণনা
করা কঠিন। এটিকে পন্ডিতেরা যেভাবে ব্যবহার করেছেন, সেভাবেই চলে আসছে। তবে বিদেশী ভাষার
ক্ষেত্রে সাধারণতঃ তালেব্য-শ হয়। যদিও এটি স্বতসিদ্ধ নয়। যেমন- এ্যাকশন, প্রমোশন ইত্যাদি।
ষত্ব বিধানের কয়েকটি নিয়মঃ
১. অ, আ, বাদে অন্য স্বরবর্ণ, ক এবং র বর্ণের পরের প্রত্যয়াদির দন্ত্য-স
সাধারণত মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন- ভবিষ্যৎ, পরিষ্কার, মুমূর্ষ।
২. ‘অতি’, ‘অভি’ এমন শব্দের শেষে ই-কার উপসর্গ এবং ‘অনু’ আর ‘সু’ উপসর্গের পরে কতগুলো
ধাতুর দন্ত্য-স এর মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন- অতিষ্ঠ, অনুষ্ঠান, নিষেধ, অভিষেক, বিষণ্ন(‘ণ্ন’
মূর্ধ-ণ পরে দন্ত্য-ন, সুষম।
৩. নিঃ, দুঃ, বহিঃ, আবিঃ, চতুঃ, প্রাদুঃ এ শব্দগুলোর পর ক্, খ্, প্, ফ্ থাকলে বিসর্গ
(ঃ) এর জায়গায় মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন-
নিঃ + কাম > নিষ্কাম
দুঃ + কর > দুষ্কর,
বহিঃ + কার > বহিষ্কার
নিঃ + পাপ> নিষ্পাপ।
৪. কিছু শব্দ স্বভাবতই মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন- আষাঢ়, নিষ্কর, পাষাণ, ষোড়শ ইত্যাদি।
৫. কতগুলো শব্দ বিশেষ নিয়মে মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন- সুষুপ্তি, বিষম, বিষয়,
দুর্বিষহ, যুধিষ্ঠির ইত্যাদি।
৬. কোথাও কোথাযও ষত্ব বিধান খাটে না। যেমন ‘সাৎ’ প্রত্যয়ের দন্ত্য-স
কখনও মূর্ধন্য-ষ হয় না। যেমন- ভূমিসাৎ, ধূলিসাৎ, আকস্মাৎ।
৭. খাঁটি বাংলা ও বিদেশী শব্দে মূর্ধন্য-ষ হয় না। যেমন- টেক্স, পুলিশ,
জিনিস, মিসর, গ্রিস, স্টেশন, মুসাবিদা।
৮. অঃ বা আঃ থাকলে তার পরে ক্, খ্, প্, ফ্ সন্ধিযুক্ত হলে বিসর্গ (ঃ)
এর জায়গায় দন্ত্য-স
হয়। যেমন-
পুরঃ + কার = পুরস্কার
ভাঃ + কর = ভাস্কর
তিরঃ + কার = তিরস্কার
পরঃ+ পর= পরস্পর
স্বতঃ + ফূর্ত= স্বতঃস্ফূর্ত
৯. অঃ বা আঃ থাকলে তার পরে ক্, খ্, প্, ফ্ ছাড়াও ত থাকলেও স হতে পারে।
যেমন-
মনঃ+ তাপ = মনস্তাপ
শিরঃ + ত্রাণ= শিরস্ত্রাণ
প্যাঁচালীঃ সহব্লগারদের
বলি, বিধান-ফিধান, ছহি তরিকতনামা সব হজম কইরা ফ্যালান। যে কয়ডা বানান এইহানে দিছি
যুক্তিযুক্তের উপরে ভরসা কইরা সেইগুলান সংগ্রহে রাহেন। ভবিষ্যতে ক্যাঁচাল বাঁধলে কামে
দিবো।
(চাইলে চলবে, না চাইলে থামবে)