ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

সমকামিতা (পর্ব-এক): কোথি, পান্থি, পারিক

ইংরেজি ‘হোমোসেক্সুয়ালিটি’ শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ ‘সমকামিতা’। এটি একটি যৌন প্রবৃত্তি, যার দ্বারা সমলিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভূত হওয়া এবং যৌনকর্ম সম্পাদন করা বোঝায়।
 
সমকামিতা কি একটি ‘যৌন আচরণ’ নাকি ‘যৌন প্রবৃত্তি’ অথবা ‘যৌন বিকৃতি’ সেটি নিয়ে সমকালীন সময়ে দেশে ও দেশের বাইরে নানামত ও চর্চার জন্ম হয়েছে। যদিও মেডিকেল টেক্সট-বুকের সংজ্ঞা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত এটি সুস্পষ্টভাবেই ‘যৌন বিকৃতি’। ফরেনসিক মেডিসিন এন্ড মেডিকেল জুরিস-প্রুডেন্স স্পষ্টভাবেই বলেছে, বিপরীত লিঙ্গের নারী-পুরুষ পরস্পর পরস্পরের যৌনাঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে যে যৌনানুভূতি ও যৌনপুলক অনুভব করে তার বাইরে সকল প্রকার যৌন-ক্রিয়াই যৌন বিকৃতি। সমকামিতা নিয়ে পৃথিবীর দেশে দেশে যে নানামত ও চর্চার জন্ম হয়েছে এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে যে বিভিন্ন প্রকার যৌন-অধিকার আন্দোলন হচ্ছে, আন্দোলনের ফলে রাষ্ট্রীয় আইনে যৌন অধিকারের উপরে নিষেধাজ্ঞা বা তার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। যদিও এ বিষয়গুলি এখনও মেডিকেল টেক্সট-বুকের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অজস্র চর্চা ও গবেষণামূলক বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তৈরি না হলে সেটি টেক্সট-বুকে অন্তর্ভুক্ত হয় না। তেমন ভিত্তি হয়ত আজও তৈরি হয়নি।      
 
সমকামিতা হচ্ছে এমন একটি যৌন আকাঙ্ক্ষা যার দ্বারা যৌন-প্রবৃত্তির মধ্যে সমলিঙ্গীয় মানুষের প্রতি যৌনাকর্ষণ অনুভূত হয় এবং সে আকর্ষণের কারণে সমলিঙ্গীয় মানুষের মধ্যে প্রেমেরও উদ্ভব ঘটে এবং যৌনসম্পর্ক স্থাপিত হয় বা হতে পারে। প্রবৃত্তি হিসেবে সমকামিতা বলতে বোঝায় সমলিঙ্গের  প্রতি যৌন বা প্রণয়ঘটিত প্রবণতা যা স্থায়ীভাবে যৌনাকাঙ্ক্ষা হিসেবে বিরাজ করে।
 
এটি বৈধ বা অবৈধ সে বিতর্ক বা আলোচনায় যাওয়া আমার এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমাদের সমাজে কিভাবে এর চর্চা হচ্ছে সে বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করাই হচ্ছে আমার মূল উদ্দেশ্য। লেখাটি লেখার জন্য আমি বিগত মাস দুই ধরে সহযোগী বইপত্র এবং তথ্য-উপাত্ত যোগাড় করেছি। এ বিষয়টি নিয়ে যারা কাজ করে তাদের অফিসে বারংবার গিয়েছি এবং কথা বলেছি। সেসবের উপরে ভিত্তি করেই এ লেখা। এছাড়াও কয়েকজন সমকামীকে এবং সমকামী নিয়ে কাজ করে তেমন কয়েকজন ডিআইসি (ড্রপ-ইন সেন্টার) ম্যানেজারকে লেখক ডেরায় ইনভাইট করেছি। এক এক করে তাদের সাক্ষাতকার নিয়ে পর্যায়ক্রমে সিরিজ আকারে তা ব্লগে পোস্ট দেবার পরিকল্পনা আছে। তার আগে এ বিষয়ে পাঠকের আগ্রহ ও স্বতঃস্ফূর্ত রেসপন্সের বিষয়টি জানার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। কারণ, সাক্ষাতকার নেবার বিষয়টি সময় সাপেক্ষ এবং খরুচে। আশা করি আপনারা আপনাদের মূল্যবান মতামত প্রদান করবেন।
সিরিজের পরবর্তী পর্বগুলি বোঝার জন্য সমকামীদের মধ্যে প্রচলিত কয়েকটি টার্ম বোঝা খুবই জরুরি, সেগুলি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়া হল।
 
কথি: সমকামী পুরুষদের মধ্যে যে মেয়েলী আচরণযুক্ত হয় এবং যৌন-ক্রিয়ার সময়ে পুরোপুরি নারীর ভূমিকা গ্রহণ করে তাকে কথি বলে।
 
কথি তার পুরুষ যৌন-সঙ্গীর লিঙ্গ নিজের পায়ুপথে প্রবেশ করতে দিয়ে, পুরুষ সঙ্গীটিকে তার ইচ্ছেমত যৌনক্রিয়ায় সহযোগিতা করে চরম যৌনপুলক পেতে সম্পূর্ণ মেয়েলী ভূমিকা পালন করে এবং এর মাধ্যমে নিজেও যৌনতৃপ্তি লাভ করে। পুরুষ যৌন-সঙ্গীর যৌনতৃপ্তির জন্য সে তার লিঙ্গ মুখে নিয়ে ওরাল-সেক্স করতেও সহযোগিতা করে। নিজের দুই উরুর মাঝে লিঙ্গকে সঞ্চালনা করতে দিয়ে বীর্যপাতের মাধ্যমে চরমপুলক পেতেও পুরুষ সঙ্গীকে সহযোগিতা করে এবং নিজেও তৃপ্ত হয়। অর্থাৎ সকলপ্রকার পেনিট্রেটিভ ও নন-পেনিট্রেটিভ সেক্স-এর সময়েই সে নারীর ভূমিকায় থাকে।  
 
কথির বেশভূষা, সাজসজ্জা, ব্যবহার, আচরণ, চলা-ফেরা সবই মেয়েলী। সমাজে তারা নিজেদেরকে মেয়ে বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে। এরা পুরুষকে আকর্ষণ করার সমস্ত কলাকৌশল রপ্ত করে এবং প্রয়োজনে তা ব্যবহার করে।
 
পাকিস্তানে এদেরকে বলা হয় জেনানা, নেপালে মেটি এবং ইন্ডিয়ায় ও বাংলাদেশে কথি।
 
পান্থি: সমকামী পুরুষের মধ্যে যৌন-ক্রিয়ার সময়ে যে পুরুষের ভূমিকা গ্রহণ করে এবং কথিকে নারীর ভূমিকায় রেখে যৌনক্রিয়া করে তাকে পান্থি বলে। অধিকাংশ পান্থিরা সমাজে আর দশজন পুরুষের মতো বসবাস করে এবং পুরুষ পরিচয় দিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করে। তারা তাদের পান্থি পরিচয় গোপন করে স্বাভাবিক পুরুষ হিসেবে থাকতেই গর্ববোধ করে, পান্থি পরিচয় প্রকাশ না করে তা গোপন করে যায়। তবে প্রকাশ করে এমন পান্থিও কদাচিৎ পাওয়া যায়। 
 
পাকিস্তান এবং ভারতের বেশকিছু প্রদেশে এদেরকে বলা হয় জিরিয়া, নেপাল, ইন্ডিয়ার বাকী অংশ এবং বাংলাদেশে বলা হয় পন্থি। 
 
 
পারিখ: কথির যৌনসঙ্গী পুরুষ প্রেমিককে বলা হয় পারিখ। তারমানে পারিখ হচ্ছে একজন পান্থি। অর্থাৎ একজন কথি বা নারীর ভূমিকায় থাকা সমকামী যাদের সাথে যৌনক্রিয়া করে তাদের মধ্যে যে কোন একজনের সাথে তাদের ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে গঠে, যার সাথে ভালবাসার সম্পর্ক জন্মে তাকে বলে পারিখ।
 
যৌন-ক্রিয়ার বিবেচনায় সকল পারিখই আসলে পান্থি তবে সকল পান্থি পারিখ নয়, কারণ যে পান্থি বা পুরুষের ভূমিকায় থাকা ব্যক্তির সাথে কোন কথি বা নারীর ভূমিকায় থাকা যৌন-সঙ্গীর ভালবাসার সম্পর্ক জন্মায় না সে পারিখ হতে পারে না।
 
একজন পারিখ শুধু যে সমকামী হয় তা নয়, সে উভকামীও হতে পারে। ব্যক্তি জীবনে বিবাহিতও হতে পারে তবে সমকামের প্রতি তার ঝোঁক থাকে। ইন্ডিয়াতে এদেরকে বলে ‘রিয়েল ম্যান”।
 
দো-পারাটা: যে সকল সমকামী পুরুষ পান্থি হিসেবে পুরুষের ভূমিকায় পেনিট্রেটিভ যৌনক্রিয়া করে আবার কথি বা নারীর ভূমিকায় নেমে অন্য পান্থির এমনকি কথির থেকে রিসেভটিভ যৌনক্রিয়ায়ও সক্রিয় অংশগ্রহণ করে তাদেরকে বলা হয় দো-পারাটা।   
 
গে: পশ্চিমা হোমোসেক্সুয়াল পুরুষ যারা পায়ুপথে যৌনসংগম করে তাদেরকে গে বলা হয়। এরা মূলত পন্থি ও দো-পারাটা হলেও এদের সামাজিক ও শিক্ষাগত মান উৎকৃষ্ট হওয়ায় এবং সঙ্ঘবদ্ধ দল থাকার কারণে এদেরকে ভিন্ন নামে অর্থাৎ গে হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরা সাধারণত শহুরে মানুষ।
 
বাই-সেক্সুয়াল: যে সকল সমকামী পুরুষ পুরুষের সাথে সমকামী যৌনক্রিয়া করে এবং একই সাথে নারীর সাথেও সমভাবে যৌনক্রিয়া করে এবং উভয় ক্ষেত্রেই যৌনতৃপ্তি লাভ করে তাদেরকে বলে বাই-সেক্সুয়াল।
 
লেসবিয়ান: সমকামী নারীদেরকে লেসবিয়ান বলা হয়। সাধারণত এরা যৌন ক্রিয়ার সময়ে একজন পুরুষের ভূমিকা নেয়, অন্যজন নারীর ভূমিকায় থাকে।
 
লেসবিয়ান যৌনক্রিযারও নানান রূপ আছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এরা পালাক্রমে নারী ও পুরুষের ভূমিকায় থাকে আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে এদের মধ্যে যে পুরুষের ভূমিকায় থাকে সে সর্বদাই পুরুষের ভূমিকায় থাকে এবং যে নারীর ভূমিকায় থাকে সে সর্বদাই নারীর ভূমিকায় থাকে। আবার দুজনেই পুরুষের ভূমিকা বা দুজনেই নারীর ভূমিকায় থেকেও যৌনক্রিয়া করে এবং তৃপ্তি পায়। 
 
(পাঠকের আগ্রহ থাকলে চলবে..)

এই সিরিজ এর সব লেখা
ছবি
সেকশনঃ অন্যান্য
লিখেছেনঃ যুক্তিযুক্ত তারিখঃ 04/05/2015
সর্বমোট 22294 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ