ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

সমকামিতা (পর্ব-চার): বৃহন্নলা (উপপর্ব- তিন)

আমরা আমাদের চারিদিকে যে বৃহন্নলা বা শিখণ্ডী বা হিজড়া দেখি তারা সবাই জন্মগতভাবে শিখণ্ডী নয়। বিশ্বাস করা কঠিন যে, এদের মধ্যে শতকরা আটানব্বই থেকে নিরানব্বই ভাগই হচ্ছে ক্যসট্রেটেড শিখণ্ডী অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে যৌনাঙ্গ কেটে শিখণ্ডী হয়েছে। যদিও এ সংক্রfন্ত কোন জরিপ নেই, যারা এদেরকে নিয়ে কাজ করে তাদের সাথে আলাপ করে তথ্যটি পাওয়া গেছে। তার মানে এরা আসলে মন, মানসিকতা ও গঠনে পরিপূর্ণ পুরুষ ছিল।
 
পহেলা এপ্রিল ২০১৫ সালে প্রাইমনিউজ.কম.বিডি-তে প্রকাশিত খবরটির দিকে দৃষ্টিপাত করলে ক্যসট্রেটেড শিখণ্ডী অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে যৌনাঙ্গ কেটে ফেলে শিখণ্ডী হবার বিষয়টি জানা যাবে। প্রকাশিত খবরটি এমন-
 
ধামরাইয়ে মাত্র ১৫ হাজার টাকায় গোপনাঙ্গ কেটে বানানো হচ্ছে হিজড়া। দেহাকৃতি হিজড়ার মতো হলেও তাদের অধিকাংশই এক সময় সাধারণ মানুষ ছিল। কিন্তু লিঙ্গ কর্তনের মধ্য দিয়ে হিজড়ার খাতায় নাম লেখায়। ধামরাইয়ের কিছু বেসরকারি ক্লিনিকে পেশাদার ও ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের দিয়েই গোপনাঙ্গ কেটে হিজড়া তৈরি করা হয়।
 
এছাড়াও রাজধানীর শ্যামলী, ঢাকা জেলাধীন ফুলতলার কয়েকটি ক্লিনিক যেন এক একটি হিজড়া তৈরির কারখানা। হিজড়া নামের আড়ালে লিঙ্গ কর্তন করা হাজার হাজার পুরুষ ঢাকাসহ সারাদেশে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, খুন-খারাবিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোন চক্রের খপ্পরে পড়ে বা স্বেচ্ছায় লিঙ্গ কর্তনকারী হিজড়াদের সঙ্গে অপরাধীদেরও যোগসাজশ রয়েছে।
 
হিজড়া পরিবারের কাছে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার এলাকার লোকজনও তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। ফলে এরা একবার যখন বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে, তখন আর ফেরার উপায় থাকে না। এ কারণে বিভিন্ন চক্রের সঙ্গে মিশে যে কোন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। পতিতাবৃত্তির সঙ্গেও তাদের অনেকে জড়িয়ে পড়েছে। লিঙ্গ কাটা হিজড়াদের তাণ্ডবে জন্মগতভাবে পৃথিবীতে আসা হিজড়ারাও এখন অসহায় হয়ে পড়ে। জানাগেছে উপজেলার বেশ কিছু ক্লিনিক দীর্ঘদিন যাবৎ সিজার ও নানা ছোট-বড় অবৈধ অপারেশনসহ হিজড়া অপারেশন করে আসছে।
 
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দালালের মাধ্যমে পুরুষদেরকে হিজড়া বানানোর জন্য এসব ক্লিনিকে নিয়ে এসে অপারেশনের মাধ্যমে পুরুষাঙ্গ কেটে মেয়ে যৌনাঙ্গে রুপান্তরিত করে দেওয়ার অভিযোগ আছে। এতে খরচ বাবদ ক্লিনিক পায় ১৫/২০ হাজার ও দালালরা ৩/৫ হাজার টাকা নেয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরুষ থেকে হিজড়ায় রুপান্তিত এক হিজড় জানায়। আর একারণে ধামরাইয়ে অবৈধ ক্লিনিক বেড়ে যাওয়ায় সাধারণি মানুষ এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
 
ধামরাই এলাকার রোম আমেরিকান হাসপাতাল নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে প্রতিমাসে ৪/৫ জনকে পুরুষাঙ্গ কেটে হিজড়া বানানো হচ্ছে। সুদুর ভারত থেকেও অনেকে এই ক্লিনিকে এসে পুরুষাঙ্গ কেটে হিজড়া হয়। এই ক্লিনিক এখন হিজড়া তৈরির কারখানা হিসেবে দেশ ও বিদেশে পরিচিত।
 
হিজড়াদের দলনেতারা নানা প্রলোভন দেখিয়ে উঠতি বয়সের ছেলেদের ওইসব হাসপাতালে নিয়ে তাদের হিজড়া বানিয়ে নিজেদের দল ভারি করছে। ১২ মার্চ ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ডের কাছে গিয়ে জানা যায় রোমহর্ষক এ ঘটনার সত্যতা। থানা বাসস্ট্যান্ডে থেকে ৫০ গজ দূরে মানিকগঞ্জ-ঢাকা প্রধান সড়কের পাশেই রোম আমেরিকান হাসপাতাল। অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই হাসপাতালের মালিক, ডাক্তার গোলাম রহমান শাহজাহান নিজেই হিজড়া বানান। কর্মচারী মোশারফ জানান, প্রায়ই এ হাসপাতালে ছেলেরা এসে কিসব অপারেশন করে। এ জন্য ডাক্তার ১৫/২০ হাজার টাকা নেয়। হিজড়ারা তাদের নিয়ে আসে।
 
ডা. গোলাম রহমান শাহজাহান গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। চাকরির পাশাপাশি এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। এলাকাবাসী মানিক জানান, ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে এ হাসপাতালটি থানা রোডের লুৎফর নায়েবীর ৩ তলায় শুরু করেন ডা. গোলাম রহমান শাহজাহান। ওই ক্লিনিকে সাধারণ কোন রোগী যান না। মূলত লিঙ্গ কেটে হিজড়া তৈরিই ওই ডাক্তারের মূল কাজ। অভিযোগের বিষয়ে রোম আমেরিকান হাসপাতালের কর্ণধার ডা. গোলাম রহমান শাহজাহান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি তো জোর করে কারও পুংলিঙ্গ কাটি না।

ছেলেরা ইচ্ছাকৃতভাবেই এসে পুরুষাঙ্গ কাটতে বলে। তিনি নিজেই কিছু তথ্য দেন। তিনি জানান, প্রতিমাসে ৩/৪ জন ছেলেকে অপারেশনের জন্য হিজড়ারা ধরে নিয়ে আসে। এরা আমার কাছে রোগী। কত দিন ধরে এ ধরনের কাজ করছেন এবং এ পর্যন্ত কতজনের পুরুষাঙ্গ কেটেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা থেকেই পুরুষাঙ্গ কাটা হয়। প্রতিমাসে রোগী আসে। তবে এর সঠিক হিসাব জানা নেই। এসব অপারেশন করতে ১০ হাজার টাকা নিই। লিঙ্গ কাটতে গিয়ে কেউ মারা গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার হাসপাতালে কেউ মারা যায়নি।

ব্যক্তিগতভাবে আমি খবরটি দেখে আঁতকে উঠেছি। কারণ, আমি  গোলাম রহমান শাহজাহানকে খুব ভাল করে চিনি। তিনি মোটেও ডাক্তার নন, একজন ইন্টারমিডিয়েট পাস ব্যক্তি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য বিভাবে প্যারামেডিকসদের ট্রেনিং কোর্সে ছোটখাট একটা চাকুরী করতেন। সে অবস্থায় তাকে এক বছরের একটা প্রশিক্ষণে বিদেশে পাঠানো হয়। প্রশিক্ষণটি ছিল কিছুটা বার্ন এর চিকিৎসা সংক্রান্ত। তিনি ভাল করে ইংরেজিই বুঝতেন না, ফলে ইংরেজি ভাষার প্রশিক্ষণে তিনি কি শিখেছেন সেটি আমার কাছে পরিষ্কার নয়। গণবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরে দেখলাম এই রহমান ভাই সেখানকার প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান। আমি ওখানকার পরিচালকসহ কয়েকজন ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি। বিষয়টি নিয়ে তারাও বিব্রত।    

ইচ্ছাকৃতভাবে বৃহন্নলা হবার বিষয়টির সাথে কোন ইমোশন জড়িত নয়, পুরোটাই আর্থিক লাভ সংক্রান্ত। আবার যারা এমএসএম তাদের অনেকের এ চর্চাটির বিষয়টিও সেক্সুয়াল গ্রাটিফিকেশনের জন্য নয়, এর সাথে প্রচুর আর্থিক লাভ সরাসরি জড়িত। সে বিষয়টি পরবর্তী কোন এক পর্বে আলোচনা করব।

ট্রান্স জেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে যারা সমাজে জন্মগ্রহণ করেছে তাদের প্রতি আমাদের অবশ্যই সহানুভূতি আছে। আমরা অবশ্যই একজন প্রকৃত  ট্রান্স জেন্ডার এর প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু এ সহানুভূতি যদি আমরা সকল ট্রান্স জেন্ডারকে দেই তবে শতকরা আটানব্বই থেকে নিরানব্বই ভাগই অপাত্রে বা ক্যসট্রেটেড বৃহন্নলাদের পক্ষে যাবে। কারণ, আমরা যাদেরকে বৃহন্নলা হিসেবে দেখি তাদের মধ্যে মাত্র এক থেকে দুইভাগ জন্মগতভাবে ট্রান্স জেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গ, বাকীরা অপ্রকৃত বা ইচ্ছাকৃতভাবে বৃহন্নলা হয়েছে। আর যারা প্রকৃত ট্রান্স জেন্ডার তাদের প্রতি সমব্যথী বা সহানুভূতিশীল হওয়া মানে এই নয় যে, তাদের সমকামিতাকেও সহানুভূতিশীল চোখে দেখছি। বরং অনেক ক্ষেত্রেই সমকামিতার চর্চাটি তাদের জন্মগত ক্রুটিকে মানুষের দৃষ্টিতে সহানুভূতিহীনতার জন্ম দেয়। 

ক্রমশ…. 
 

এই সিরিজ এর সব লেখা
ছবি
সেকশনঃ সাধারণ পোস্ট
লিখেছেনঃ যুক্তিযুক্ত তারিখঃ 29/05/2015
সর্বমোট 10954 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ