ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেইসবুকে!

সমকামিতা (পর্ব-ছয়): কেন সমকামী হয়

সমকামিতা কেন হয় এ নিয়ে নানান প্রশ্ন এবং ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে। হাল আমলে এসব আলোচনা যে কোন সময়ের চেয়ে জোরেশোরে প্রচারিত হচ্ছে। সম্ভবত এর কারণ, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত অর্থে এটিকে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক যৌন চর্চা বলে স্বীকার করা, না করা বিষয়ক স্বীয় মানসিক প্রবণতা ও আত্ম-বিবেচিত অবস্থান। একাংশের মতে প্রচলিত যৌন চর্চার থেকে এ চর্চাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ও অগ্রহণযোগ্য, আরেক অংশের মতে এটিও স্বাভাবিক যৌনক্রিয়া যা যৌন স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে। সমাজে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা একজন নারী কেন একজন পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয় বা একজন পুরুষ কেন একজন নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয় সেটি নিয়ে অস্বাভাবিকতার কোন প্রশ্ন ওঠে না, বরং কেন নারী-পুরুষের পরস্পরের মধ্যে এ স্বাভাবিক আকর্ষণ অনুভূত হয়, গবেষণা করে সেটি বের করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এটি ইতিবাচক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং এর ব্যতিক্রম হলে তাকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাও অব্যাহত। অন্যদিকে সমকামিতার ক্ষেত্রে বিষয়টিকে অস্বাভাবিক যৌন আচরণ ও চর্চা কি না সেটিকে হাইপোথিসিস হিসেবে ধরে নিয়ে গবেষণা কর্ম পরিচালিত হয়। অনুসিদ্ধান্ত বা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে মতামত প্রদান করতে হয়, এটি স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক।

একটি উদাহরণ দেওয়া যাক- বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ সম্পন্ন কোন ব্যক্তির বোধ যদি পাল্টে গিয়ে সমলিঙ্গের দিকে ধাবিত হয় তবে সেটিকে মানসিক রুচির অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়েছে বলে চিকিৎসার শরণাপন্ন হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সমলিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ হয় এমন ব্যক্তির বোধ পরিবর্তন হয়ে যদি তা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ধাবিত হয় তবে তার বোধ স্বাভাবিক হচ্ছে বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা হয়।

সমকামিতা কেন হয়? এটি নিয়ে কথা বলতে গেলে স্বাভাবিকভাবে যে প্রশ্নগুলি সামনে চলে আসে তা হল- সমকামিতা কি জন্মগত কোন ক্রুটির কারণে হয়, বা এটির উপরে কি কোন হরমোনের প্রভাব কাজ করে, নাকি এটি একটি সামাজিক প্রভাবের ফলাফল।

এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা অব্যাহত আছে। সুইডেনের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও গবেষক ডঃ ইভাঙ্কা স্যাভিক এ ব্যাপারটি নিয়ে যে গবেষণা করেছেন সমকামী আন্দোলনকারীরা তাদের যুক্তির পক্ষে সে ফলাফলকে খুব গুরুত্বের সাথে ব্যবহার করে থাকেন। ডঃ স্যাভিক পুরুষের ঘাম এবং নারীদের প্রস্রাব থেকে এক জাতীয় জৈব আবিষ্কার করেছেন। এটি মূলত  হরমোনের নির্জাস।  ডঃ স্যাভিক হরমোনের নির্জাস এই জৈবর নাম দিয়েছেন ‘ফর্মোন’। গবেষণায় তিনি দেখেছেন যে,  গে চর্চাকারী এবং নারী উভয় গোষ্ঠীই পুরুষ ফর্মোন দ্বারা একই ভাবে আকৃষ্ট হয়। এর থেকে উনি সিদ্ধান্তে আসেন সমকামিতা শুধু ‘অর্জিত ব্যাবহার’ নয় বরং এর একটা ‘জৈবিক ভিত্তি’ আছে।

ডঃ স্যাভিক এর গবেষণালব্ধ ফলাফলের সত্যতা নিয়ে এর পরে গবেষণা করেন ডঃ ওয়ারেন থ্রম্পটন। ডঃ থ্রম্পটন তার গবেষণায় দেখার চেষ্টা করেন, ডঃ স্যাভিক যে প্রক্রিয়ায় তার গবেষণায় সমকামিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটি আসলে কতটা নির্ভরযোগ্য। অর্থাৎ ডঃ স্যাভিক সমকামিতার বিষয়ে ফর্মন সিলেকশনের যে ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির আসলেই যৌক্তিক কোন ভিত্তি আছে কি না এটি নিয়ে গবেষণা করেন ডঃ থ্রম্পটন। ডঃ থ্রম্পটন তার গবেষণায় প্রমাণ করতে সমর্থ হন যে, সমকামিতার পেছনে অর্জিত জ্ঞান বা ব্যবহারের কোন ভিত্তি নেই। তিনি প্রমাণ করতে সমর্থ হন যে, জন্মের থেকেই গে দের নির্দিষ্ট কোন ফর্মোনই যে পছন্দ ছিল তার কোনই ভিত্তি নেই। ডঃ থ্রম্পটনের গবেষণার ভিত্তি এতোটাই শক্ত ছিল যে, শেষ পর্যন্ত ডঃ স্যাভিকও ডঃ থ্রম্পটন এর গবেষণার ফলাফলকে মেনে নেন। তিনি স্বীকার করেন যে, গে-দের ক্ষেত্রে নারীদের মতন ফর্মন প্রীতি জন্মগত বা অর্জিত এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছুই বলা সম্ভব নয়। ডঃ স্যাভিক নিজেই তার গবেষণালব্ধ ফলাফলের উপরে নির্ভর করতে নিরুৎসাহিত করেন।

পরবর্তীতে  ডঃ স্যাভিক উদ্ভাবিত ফর্মনের উপরে আরও অনেক গবেষক গবেষণা করে দেখতে পান যে, সমকামীদের জৈবিকতার  সাথে সমকামী চর্চার কোন সম্পর্ক নেই। কোনও গবেষকই এ বিষয়ে যোগসূত্র বা সম্পর্কের দাবী করেননি। সুতরাং এটি মূলত পরিবেশগত অবস্থান ও মানসিক চিন্তার উপরে নির্ভরশীল।

জেনেটিক্সের সাথে সমকামিতার সম্পর্কের বিষয়টিও প্রতিষ্ঠিত কোন বিষয় নয়। এটি প্রতিষ্ঠার জন্য ‘গে জীন’ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে কিন্তু এটিকে নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। এ ব্যাপারে কোন প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক সত্যও নেই। এটি এখনও ‘ওয়ার্ক ইন প্রগ্রেস’ বা ‘হাইপোথিসিস’ হিসেবেই আছে। এই ব্যাপারে মূলত দুটি ব্যাপার নিয়ে গবেষণা হয়েছে- ক) আইডেন্টিক্যাল টুইন ও খ) সমকামী পুরুষের মাতৃকুল।

জেনেটিক্সের সাথে সমকামিতার কোন সম্পর্ক আছে কি না সেটি দেখার জন্য গে এবং লেসবিয়ানদের নিয়ে আলাদা আলাদা গবেষণা করা হয়েছে। কারণ, পূর্বের গবেষণাগুলিতে নারীদের মধ্যে একই ধরনের এম্পিরিক্যাল স্টাডি করে এ ধরণের কোন সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। নারীদের মধ্যে বাই সেক্সুয়াল হবার বিষয়টি সম্পর্কেও জেনেটিক্স নিশ্চিত করে কিছু প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

আইডেন্টিক্যাল টুইন এর ওপর গবেষণা করা হয়েছে। আইডেন্টিক্যাল টুইন এর জেনেটিক গঠন একই রকম সুতরাং টুইনদের দুজনেই যদি গে হয়, তাহলে বোঝা যাবে, হয় একই ধরনের জেনেটিক্স ফ্যাক্টর থেকে গে তৈরি হচ্ছে বা মাতৃজঠরে কোন পরিবর্তন থেকে এরা গে হচ্ছেন। এই ব্যাপারে সব থেকে বৃহত্তম স্যাম্পল নিয়ে কাজ হয়েছে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের স্যাম্পল ছিল প্রায় ১৪০০০ আইডেন্টিক্যাল টুইন। গবেষণায় দেখা গেছে টুইনদের মধ্যে এক ভাই গে হলে অন্য ভাই এর গে হওয়ার সম্ভাবনা ৩৪%। লেসবিয়ানদের ক্ষেত্রে এটা ৩০%। অন্যান্য স্টাডিতেও এর কাছাকাছি ফল পাওয়া গেছে। কোন গবেষণাতেই টুইনদের মধ্যে এ প্রবণতা ও চর্চা ১০০% বা তার ধারে কাছেও নেই। যে সমস্ত সমাজে এ সব গবেষণা করা হয়েছে সে সব সমাজের সাধারণ সমকামীর শতকরা হারও এর কাছাকাছি। সুতরাং সমকামী চর্চা জন্মগত বা জেনেটিক এটি বলার পেছনে কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি।  

তারপরেও নতুন কোন সংযোগ আছে কিনা তা নিশ্চিত হবার জন্য আইডেন্টিক্যাল টুইন এর গবেষণা থেকে প্রাপ্ত  ৩০% সংযোগ বা সংশ্লিষ্টতাকে আমলে নিয়ে আবারও গবেষণা করা হয়েছে। কিন্তু কোন প্রকার জেনেটিক সংযোগ বা সংশ্লিষ্টতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। গবেষক ও বিজ্ঞানী ডঃ বেইলী মনে করেন যেহেতু আইডেন্টিক্যাল টুইনরা একই ফ্যামিলি বা সমাজ বা যৌন পরিবেশে মানুষ হয়েছে, সেহেতু ৩০% ক্ষেত্রে দুই ভ্রাতাই সমকামী হয়েছে। এটি জেনেটিক্স এর কারণে হয়নি। ডঃ বেইলী তার গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল দিয়ে বিষয়টি প্রমাণ করতে সমর্থ হন। তিনি এ বিষয়ে আরেকটি পরীক্ষা করেন। তার এ পরীক্ষায় দুই যমজ ভ্রাতার মধ্যে একজন সমকামী এবং অন্যজন স্বাভাবিক। দেখা গেছে একই সমাজ এবং পরিবারে বেড়ে ওঠার পরেও শিশু বয়েস থেকেই তাদের আচরণ আলাদা হয়েছে। 

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে একই পরিবেশে মানুষ, একই জেনেটিক গঠনের হলেও দুজনের সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন আলাদা হতে পারে। ডঃ বেইলী দেখতে পান, যদি বিশেষ কোন ঘটনা; যেমন বয়স্ক পুরুষ দ্বারা ধর্ষণ বা অন্য কোন ধরণের যৌন অভিজ্ঞতা তাদের জীবনে আলাদা হয় তাহলে তাদের চর্চাও আলাদা হতে পারে এর সাথে জেনেটিক্স বা জন্মগত কোন বৈশিষ্ট্যের মিল নেই এবং এমন কোন বৈশিষ্ট্য এর জন্য দায়ী নয়। পৃথিবীর বৃহত্তম টুইন স্টাডিগুলির সবগুলিই সমকামিতার সাথে জীনের বা জন্মগত সম্পর্ককে সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করে দিয়েছে।

গে-জিন নামে যে জিনটি জনপ্রিয় হয়েছে তার নাম Xq28। এটি নিয়ে গবেষণা যারা গবেষণা করেছেন তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন ডীন হ্যামার। উনি ১৯৯৪ সালে ৭৬ টি গে-এর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে যে সিদ্ধান্তে এসেছিলেন তা হচ্ছে-  গে-দের মাতৃকুলে সমকামীর সংখ্যা বেশী। সেই থেকেই Xq28কে একটি জেনেটিক মার্কার হিসেবে প্রস্তাবনা করা হয় যা পরবর্তীতে গে-জিন নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে বিজ্ঞানী বেইলী এবং ম্যাকনাইট একই পরীক্ষা চালিয়ে এ বিষয়ে কোন ইতিবাচক ফলাফল পাননি এবং তারা এই গে-জিন তত্ত্বকে ভুল বলে প্রমাণ করেন। অর্থাৎ গে-দের মাতৃকুলে সমকামীর সংখ্যা বেশী- এটিরও কোন জেনেটিক ভিত্তি নেই।

বিজ্ঞানী বেইলী এবং ম্যাকনাইট এর মতো বিজ্ঞানী রাইস এবং এন্ডারসন সায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে ৫৭ টি গে-র ওপর পরীক্ষা চালিয়ে Xq28 জীনতত্ত্বকে সম্পূর্ণ বাতিল প্রমাণ করেন। পরবর্তীকালে জেনোম প্রজেক্টের গবেষণায় দেখা গেছে সমকামীদের মাতৃকুলের সাথে সম্পর্কের জন্যে Xq28 ছাড়া আরও অনেক মার্কারই দায়ী-যেমন 8p12, 7q36 and 10q26। কিন্তু একটি বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন যে, এর থেকে কোনোভাবেই বলা যায় না- এই মার্কারগুলির জন্যে সমকামিতা হয়ে থাকে! কারণ, মার্কারগুলির স্ট্যাটিস্টিক্যাল সাম্পলিং স্পেস খুব ছোট। পরবর্তীকালে এই নিয়ে হিউমান জেনোম প্রজেক্টে আরও কাজ হয়েছে- কিন্তু জীনের কারণে যে সমকামী হয় সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি।  

হেরিডিটিক্যাল ট্রেটের ইনহেরিটেন্স নিয়ে ডঃ কলিনস (২০০৭) জেনোম প্রজেক্টের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মন্তব্য করেন; মানব জাতির সব অভিব্যক্তির মধ্যেই যেমন- রাগ, গোঁয়ার্তুমি, আবেগের সাথে জেনেটিক্সের জটিল ছাপ খুঁজে পাওয়া যাবে- কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এইসব অভিব্যক্তির সব কিছুই জেনেটিক্স নিয়ন্ত্রণ করছে। বরং তা পরিবেশ এবং সমাজ দ্বারাই বেশি নিয়ন্ত্রিত।

মানুষের ক্ষোভ, রাগ ভালোবাসা ইত্যাদির জন্যেও অনেকাংশে জীন দায়ী কিন্তু সেটিই সব না। পরিবেশ এবং সমাজই মানুষের সর্বশেষ নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আচার-আচরণ, পরিবেশ, চর্চা, প্রথা ইত্যাদি আমাদের ভাবাবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা যেটিকে যেভাবে ভাবি সেটিকে সেভাবে চর্চা করতে পারব কি পারব না সেটির অনেককিছুই পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সে দিক দিয়ে বিবেচনা করলে দেখা যাবে সমকামিতার বিষয়টিও হয়ত অনেকের মধ্যেই সুপ্ত ভাবে আছে কিন্তু কখনও সেটা প্রয়োগ করেনি- বিশেষ কিছু সামাজিক পরিবেশ বা ঘটনা, তাকে প্রায়োগিক করে তুলতে পারে। আবার উল্টোও হতে পারে- সমকামিতার বিষয়টি হয়ত কারও মধ্যে সুপ্তই নেই কিন্তু সেও উপযুক্ত পরিবেশে সমকাম করে বসতে পারে। ঠিক একইভাবে কোন সমকামী ব্যক্তিও কোন পরিবেশের কারণে সমকামিতা থেকে দূরে সরে আসতে পারে। রাগ বা আবেগ অনুভূতিরমত এটিও চিরস্থায়ী নয়। চিকিৎসা করলে এবং পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে সমকামিতা ভাল হয়ে যায়। এ ধরণের অসংখ্য উদাহরণ আছে।

মস্তিষ্কের গঠন এবং সমকামিতার মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে কি না সেটি নিয়েও ব্যাপক গবেষণা হয়েছে এবং  গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে এ দুইয়ের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। তৃতীয় ইন্টারস্টিয়াল নিউক্লিয়াস-এন্টারিয়াল হাইপোথ্যালামাস (INAH3) এর গঠনে মেয়ে এবং গে-দের কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায় (সিমন ল্যাভে,১৯৯১)। কিন্তু বাইনের (২০০১) কাজ থেকে জানা যায় গে-দের INAH3 ছোট হলেও নিউরনের সংখ্যা স্বাভাবিক পুরুষদের সমান যা নারীর ক্ষেত্রে কিছু কম থাকে। সিমন ল্যাভের পরীক্ষায় স্যাম্পল সাইজ ছিল ৩৭- তার মধ্যে তিনজন গে-র INAH3 স্বাভাবিক পুরুষদের মতনই ছিল। আবার তিনজন স্বাভাবিক পুরুষের INAH3 মেয়েদের মতন ছোট ছিল। সুতরাং INAH3 স্টাডি থেকেও নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যায় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই IANH3 মানুষের ব্যবহারের ফলে বদলায়। সুতরাং উপযুক্ত পরিবেশ এবং চিন্তার শুদ্ধতা সমকামী মনোভাব থেকে তাদেরকে স্বাভাবিক চর্চায় ফিরিয়ে আনতে পারে, যদি তারা চায়। এটি স্থায়ী কোন বিষয় নয়

আজ পর্যন্ত যতটুকু গবেষণা হয়েছে, তার ভিত্তিতে এটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে যে, সমকামী হবার পেছনে জীনের বা জন্মগত বিষয়ের কোন মুখ্য সম্পর্ক নেই। এখানে পরিবেশ ও অর্জিত গুণাবলীর ভূমিকা বেশী। সমকামীদের এক্সক্লুসিভ জিন বা জিন বৈশিষ্ট্য প্রকট বলে কিছু নেই। গবেষণালব্ধ ফলাফলই এটিকে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। উপযুক্ত পরিবেশ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে সমকামীদের স্বাভাবিক যৌন জীবনে ফেরানো সম্ভব। এরকম অনেক উদাহরণ আছে যা পরবর্তীতে আলোচনার ইচ্ছে আছে।                                           ক্রমশ….

তথ্যসূত্র:
সমকামিতার কি কোন জৈবিক ভিত্তি আছে? বিপ্লব পাল, মুক্তমনা ব্লগ, জুলাই ২১, ২০০৯।
তিনি যে রেফারেন্সসমূহ ব্যবহার করেছেন তা হল-
[১] Murray, B. (2000). Sexual identity is far from fixed in women who aren’t exclusively heterosexual. Monitor on Psychology, 32(3), pp. 64-67.
[২] http://www.nytimes.com/2005/05/10/science/10smell.html?_r=1&incamp=article_popular
[৩]http://www.narth.com/docs/smell.html
[৪]Bailey, JM; Dunne,MP; Martin,NG (2000): Genetic and Environmental influences on sexual orientation and its correlates in an Australian twin sample. J. Pers. Social Psychology 78, 524-536
[৫]Bailey, NM; Pillard,RC (1995): Genetics of human sexual orientation. Ann. Rev. Sex Research 6, 126-150.
[৬] Hershberger, SL (1997): A twin registry study of male and female sexual orientation. J. of Sex Research 34, 212-222.
[৭] Wilson, G.D., & Rahman, Q. (2005). Born Gay: The Biology of Sex Orientation. London: Peter Owen Publishers
[৮] Rice, Anderson, Risch and Ebers (1999) Male Homosexuality: Absence of Linkage to Microsatellite Markers at Xq28. Science 23(5414): pp. 665-667. Retrieved 2007-01-18
http://mypage.iu.edu/~bmustans/Mustanski_etal_2005.pdf
[৯] http://www.lifesitenews.com/ldn/2007/mar/07032003.html

এই সিরিজ এর সব লেখা
ছবি
সেকশনঃ সাধারণ পোস্ট
লিখেছেনঃ যুক্তিযুক্ত তারিখঃ 04/06/2015
সর্বমোট 42475 বার পঠিত
ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুণ

সার্চ